ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

করোনা মোকাবিলায় কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সতকর্তা

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
করোনা মোকাবিলায় কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সতকর্তা সভা, ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: পর্যটন শহর, সীমান্ত নগরী এবং বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শিবির অবস্থানের কারণে কক্সবাজারেও করোনা ভাইরাস ঝুঁকি মোকাবিলায় বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরের পাশাপাশি আকাশ ও নৌ-পথে কক্সবাজারে আসা লোকজনের করোনা ভাইরাস শনাক্তে বিমান ও স্থলবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০০ শয্যার পৃথক আইসোলেশান ইউনিট।

তবে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়া এবং আতংকিত না হয়ে সচেতনভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান।

ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যেহেতু কক্সবাজারও কিছুটা ঝুঁকিতে রয়েছে।

সেজন্য করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কক্সবাজারেও বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দরে আমাদের মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এছাড়াও রামু ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০০ শয্যার পৃথক আইসোলেশান ইউনিট। .সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অনেকটা গাদাগাদি করে বসবাস করছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি এদের মানবিক সেবাদানে নিয়োজিত রয়েছে অসংখ্য বিদেশিও।

অন্যদিকে পর্যটন নগরী হওয়ায় প্রতিদিন কক্সবাজারে আসছে দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটক। এছাড়াও টেকনাফ স্থলবন্দরে প্রতিদিন আসছে বিদেশি জাহাজ। যে কারণে করোনা ভাইরাসের জন্য কক্সবাজারও কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বাংলনিউজকে জানান, তুলনামূলক ছোট জায়গায় বিশাল একটা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এখানে বসবাস করছেন। যে কারণে রোহিঙ্গা শিবিরকে আমি খুব ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছি। তাই করোনা মোকাবিলা ইতোমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো রোগী শনাক্ত হলেই আমরা তাকে আলাদা করে নেওয়া ব্যবস্থা রেখেছি। এছাড়া সরকারিভাবে যেসব নির্দেশনা আসছে, সেই নির্দেশনা মতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক একেএম সাইদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রতিদিন ১৩টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে প্রায় একহাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে ৪০-৫০ জন থাকে বিদেশি যাত্রী। তাই ঝুঁকি এড়াতে আমরা আকাশ পথে আসা সব যাত্রীকেই থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছি।

টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আফছার উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, টেকনাফ স্থলবন্দরে লোকজনের আসা-যাওয়া কম। বেশিরভাগ জাহাজই আসে। আর এসব জাহাজের বেশিরভাগ হচ্ছে মিয়ানমারের। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় আমরা এ বন্দরকে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি। যেকারণে মেডিক্যাল টিম কাজ করছে এবং বোট থেকে কেউ নামলেই থার্মাল স্ক্যানের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন নগরী হওয়ায় প্রতিদিন কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা আসে এবং সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের সমাবেশ লেগেই আছে। তার উপরে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ছোট জায়গায় অনেকটা গাদাগাদি করে বসবাস করছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তাই আমরা কোনোভাবেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাই অমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরসহ করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে বা সচেতনতামূলক আমাদের যে উদ্যোগ তা নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

বিমানের যাত্রী ছাড়াও বিলাসবহুল বাসগুলোতে যারা কক্সবাজার আসছেন তাদেরও স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, করোনা ভাইরাস শনাক্তে কাজের পরিধি বাড়াতে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। ইনফ্রারেড থার্মাল ইন্সট্রুমেন্টের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। থার্মাল স্ক্যানারের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষ যাতে সচেতন হয়। সেজন্য সচেতনমূলক প্রচারণাও বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।