ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পলি জমেছে এফ-৬ যুদ্ধবিমানে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
পলি জমেছে এফ-৬ যুদ্ধবিমানে!

রাজশাহী: গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে জায়গা বদল করেছিল রাজশাহী মহানগরীর এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি। কথা ছিল শিগগিরই এটিকে শহরের আলিফ-লাম-মীম ভাটা এলাকায় বসানো হবে। কিন্তু তারপরও প্রায় তিন মাস হতে চলেছে যুদ্ধবিমানটি জায়গা মতো বসানো হয়নি। এরই মধ্যে মাটির স্তর পড়ে তামাটে রং নিয়েছে এ যুদ্ধবিমান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে এটি। 

যদিও রাজশাহী সিটি করপোরেশন বলছে, যুদ্ধবিমানটি বসানোর জন্য এরই মধ্যে স্ট্যান্ড নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে আলিফ-লাম-মীম ভাটা এলাকায় নির্মাণাধীন বাইপাস সড়কের প্রবেশমুখে আলোকায়নেরও ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে মার্চ মাসের শুরুতেই যুদ্ধবিমানটি সেখানে বসানো হবে।  

স্থানীয়দের দাবি, সত্যি সত্যিই ধ্বংসাবশেষে রূপ নেওয়ার আগেই দ্রুততম সময়ে যুদ্ধবিমানটিকে নতুন ঠিকানায় বসানো হোক।

বর্তমানে মহানগরীর 'রাজশাহী-নওগাঁ থেকে মোহনপুর, রাজশাহী-নাটোর সড়ক, পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ে ক্রসিংয়ের ওপর র‍্যামসহ ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ২০২.৫০ মিটারের ফ্লাইওভার এবং ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের র‍্যাম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩২ টাকা। এর সঙ্গে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলিফ-লাম-মীম ভাটা থেকে বিহাস পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ফোর লেন সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এর কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ সড়কের প্রবেশ মুখেই বসানো হবে যুদ্ধবিমানটি। আর এর মধ্যে দিয়েই দীর্ঘ দুই যুগ পর জায়গা বদল করে নতুন ঠিকানা পাবে এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি। বিমানবাহিনীর দেওয়া এ যুদ্ধবিমানটি গত টানা ২৫ বছর মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ের ঐতিহ্য হয়ে ছিল।  

নতুন সড়কটি রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর সড়কে গিয়ে মিলিত হয়েছে। দুই সড়কের সংযোগস্থলে থেকে এফ-৬ মডেলের ‘যুদ্ধবিমান’ নির্দেশনা দেবে ‘বিমানবন্দরের’ দিকে। এটি হবে নতুন সড়কের মূল আকর্ষণ। তবে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে থাকা যুদ্ধবিমানটি এখন চেনা-ই দায় হয়ে পড়েছে।   
  
মহানগরীর আলিফ-লাম-মীম ভাটা এলাকার ইফতেহাদুল ইসলাম পলক বলেন, গত বছরের নভম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এই যুদ্ধবিমানটি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দফতরের সাথে থাকা সিঅ্যান্ডবির মোড় থেকে খুলে এখানে আনা হয়। কথা ছিল জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে  সিঅ্যান্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করা হবে। এটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তার ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। কিন্তু রাজশাহী জেলা পরিষদের জমি নিয়ে সিটি করপোরেশনের দ্বন্দে এখনও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। যুদ্ধবিমানটিও বসানো হয়নি।  

সিঅ্যান্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের স্থান।  ছবি- বাংলানিউজ

'একজন নিরাপত্তা প্রহরী রাখা হয়েছে। কিন্তু বিমানটির খুলে নিয়ে আসা বিভিন্ন অংশ এখনও জুড়ে দেওয়া হয়নি। কোনো রকম যত্ন না থাকায় বিমানটিতে মাটির প্রলেপ পড়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত এটিকে নতুন স্থাপন করা না হলে ধীরে ধীরে বিমানের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া চুরির ভয়তো রয়েইছে। '  

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, টানা ২৫ বছর বিমানবাহিনীর দেওয়া এ যুদ্ধবিমানটি রাজশাহী মহানগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ের অলঙ্কার হয়েছিল। এটি দেখেই অনেক জায়গার দিকনির্দেশনা পেতেন বাইরের অঞ্চল থেকে আসা মানুষজন। এটি দেখে কৌতূহল মেটাতেন শহরের মানুষ। কিন্তু জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপনের জন্য সেখান থেকে বিমানটি সরিয়ে অলিফ-লাম-মীম ভাটা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিন মাস হয়ে গেলেও তা নতুন জায়গায় না বসানো খুবই দুখঃজনক ঘটনা। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান রাজশাহীর সামাজিক সংগঠনের এই নেতা।     

বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় আছে জানিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, যুদ্ধবিমানটি প্রতিস্থাপনের জন্য এরই মধ্যে স্ট্যান্ড নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া শহরের আলিফ-লাম-মীম ভাটায় নির্মাণাধীন বাইপাস সড়কের প্রবেশমুখে আলোকায়নেরও ব্যবস্থা হয়ে গেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চের শুরুতেই তা প্রতিস্থাপন করা হবে।

'বিমানটি স্থানান্তরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের কাজ প্রাথমিক ধাপ পার করেছে। আর জমি নিয়ে যেই জটিলতা হয়েছিল তাও এখন সমাধানের পথে। বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় ম্যুরালটি মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি এলাকাতেই নির্মাণ হবে। জেলা পরিষদের জমিতে এই ম্যুরাল নির্মাণ করবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।

এদিকে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকা পরিদর্শন করেছেন। রাজশাহী জেলা পরিষদ ম্যুরালটি নির্মাণের জন্য শেষ পর্যন্ত বাড়তি জমি দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এক-দুই দিনের মধ্যে জেলা পরিষদের সভায় এর অনুমোদন হবে বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক।  

এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সকালে যুদ্ধবিমানটি সিঅ্যান্ডবি মোড়ের নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে নামানোর কাজ শুরু হয়।  স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার কাজী শাহজাহান জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের আকাশসীমার সুরক্ষায় এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি কেনা হয়েছিল। বিমানটি ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সার্ভিস দিয়েছে। পরে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন একটি অব্যবহৃত বিমান সিঅ্যান্ডবি মোড়ে স্থাপনের আবেদন জানায়। অনুমোদনে পর ১৯৯৪ সালে রাজশাহী সিঅ্যান্ডবি মোড়ে কংক্রিটের তৈরি স্ট্যান্ডের ওপর এ বিমানটি স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। যুদ্ধবিমানটি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। এ মডেলের বিমানের ইঞ্জিন সাধারণত ভেতরেই থাকে। তবে এটিতে ইঞ্জিন নেই। কিন্তু এখনও দুই পাখার সঙ্গে ড্রপ ট্যাংক আছে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিমানটি মডেল হিসেবে রূপ দেওয়া হলেও এর পাইলটের বসার স্থানটি ঠিক রাখা হয়। যদিও স্থানান্তরের কারণে এখন বিমানটির পাখা এবং ড্রপ ট্যাংকগুলো খুলে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবারও তা যথাস্থানে লাগিয়ে দেওয়া হবে বলে।  

আরও পড়ুন>>> জমি নিয়ে টানাপোড়েনে বন্ধ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
এসএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ