ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জমি নিয়ে টানাপোড়েনে বন্ধ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের নির্মাণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
জমি নিয়ে টানাপোড়েনে বন্ধ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের নির্মাণ

রাজশাহী: রাজশাহীতে চলতি বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ম্যুরালটির উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। সাড়ে চার মাস আগে বঙ্গবন্ধুর দেশের সবচেয়ে বড় ম্যুরালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন।

কিন্তু জমি নিয়ে জেলা পরিষদ ও রাসিক দ্বৈরথে এখনো নির্মাণকাজই শুরু হয়নি! এর জন্য অবশ্য সিটি করপোরেশনের গাফিলতিতেই দায়ী করছেন অনেকেই।

সিটি করপোরেশন একদিকে বলছে, ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দসহ সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কিন্তু এখন তিনি বেঁকে বসায় নতুন এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা পরিষদ বলছে, রাসিকের নিজস্ব জায়গায় ম্যুরাল নির্মাণ করতে হবে। কারণ বাড়তি জায়গা দিতে গেলে তাদের নিজস্ব স্থাপনার ক্ষতি হবে।

রাসিক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ের দক্ষিণ পাশে জেলা পরিষদের জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে হাত দেয় সিটি করপোরেশন। ফলক উন্মোচনের পর জায়গা নিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে দ্বৈরথ শুরু হয়।  

নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানের ১৯ শতাংশ জায়গা সিটি করপোরেশন ব্যবহার করে আসছিল। ওই জায়গাটুকুর মধ্যেই তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করবে বলে জানালেও এখন রাসিক আরো ৪২ শতাংশ জায়গা চায়।

রাজশাহী জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা বলছেন, বাড়তি জায়গা দিতে হলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের সীমানা প্রাচীর ভাঙতে হবে। তাছাড়া ওই স্থানের পাশেই আধুনিক ডাকবাংলো নির্মাণ করতে চায় জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তাই নতুন করে বাড়তি জায়গা দিতে চায় না তারা।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, 'রাজশাহীতে আমরাই প্রথম বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করেছি। সিটি করপোরেশন আরেকটি ম্যুরাল নির্মাণ করতে চাইলে কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু সিটি করপোরেশন আরো জায়গা চায় জেলা পরিষদের কাছে। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত ২৪ ডিসেম্বর মিটিং করেছিলাম। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে জায়গাটুকু তারা আগে থেকেই ব্যবহার করছিল সেখানেই ম্যুরাল করলে কোনো সমস্যা নেই। বাড়তি জায়গা দিতে হলে আমাদের নিজস্ব স্থাপনার ক্ষতি হবে।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের শিল্পমান বিষয়ক পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন, শিল্পকলা ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এস এম জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের সংগ্রামী ইতিহাস ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর বড় ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে।

‘এটি দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা হতে যাচ্ছে। তাই আমরা এর বেদি ও বঙ্গবন্ধুর অবয়বসহ পুরো নকশার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পর্যালোচনা করে মতামত দিয়েছি। আমরা যে নকশাটি চূড়ান্ত করেছি তা বাস্তবায়ন করতে আরও জায়গার প্রয়োজন।

অনেকেই এর জন্য অবশ্য সিটি করপোরেশনের গাফিলতিতেই দায়ী করছেন। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জায়গার নিষ্পত্তি না করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের মতো একটি স্পর্শকাতর প্রকল্পে হাত দেওয়া মোটেই ঠিক হয়নি সিটি করপোরেশনের।  

‘এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সবকিছুই নির্বিঘ্ন করার দায়িত্ব ছিল তাদের। ফলক উন্মোচনের পর এখন জায়গা নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার দায়ভার সিটি করপোরেশন কি এড়াতে পারবে,’ এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

এদিকে, জায়গা নিয়ে এই সংকট দেখা দেওয়ায় কিছুদিন আগে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জেলা পরিষদের কাছে মতামত তলব করেছে। এরই মধ্যে নিজেদের মতামত মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছে জেলা পরিষদ।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দসহ সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপরও নতুন করে এখন কেন এই সংকট তৈরি হচ্ছে তা বোধগম্য নয় আমাদের।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অবগত রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসলেই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণকাজের জন্য টেন্ডার ও নকশা বাছাই শেষ হয়েছে। এখন প্রকল্পের কাজ শুরু করার অপেক্ষায় সিটি করপেরেশন।

আশরাফুল হক জানান, ৫০ ফুট উচ্চতার এই ম্যুরাল হবে দেশের অনন্য স্থাপনা। এ প্রকল্পে অর্থের যোগান দিচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নির্মাণকাজ শেষে চলতি বছরেই বঙ্গবন্ধু জন্মদিন ১৭ মার্চে ম্যুরালটি উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
এসএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।