ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চিকিৎসকের বিকল্প ‘মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
চিকিৎসকের বিকল্প ‘মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সবদিকে যখন কনোনাভাইরাসের আতঙ্ক চলছে ঠিক এমন সময় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাঁচ শিক্ষার্থী বানিয়েছে একটি ‘মেডিকলে রোবট’। তারা এই রোবটটির নাম দিয়েছেন ‘মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল’। চিকিৎসক বা নার্সের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের ধারণা নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হয়েছে এ মেডিকেল রোবট।

‘মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল’ নামে ওই রোবট মানুষের শরীরের তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন, অক্সিজেনের পরিমাণ ও রক্তচাপ পরিমাপসহ বিভিন্ন পরীক্ষা- নিরীক্ষা করতে পারে। সংযোজন করা হচ্ছে আরও অত্যাধুনিত প্রযুক্তি।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী  আশিকুর রহমান,  আনাসুর রহমান,  মীর আমিন, মেহেদী হাসান ও ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষর্থী আব্দুল মোন্নাফ মাত্র ১৫দিনে ‘মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল’ রোবটটি বানিয়েছেন। এ কাজে তাদের সহযোগীতা করেছেন ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক)  আবুল কাশেম।

>>>চিকিৎসকের বিকল্প ‘মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল’

জানা যায়, আল্ট্রাসনিক সেন্সরের সাহায্যে রোবটটি চলাফেরাও করতে পারে। এর পাশাপাশি সালাম দিয়ে নিজের নাম, দেশের নাম, জাতির জনকের নাম ও প্রধানমন্ত্রীর নাম বলতে পারে মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল।

রোবটটির নিয়ন্ত্রণে স্থাপন করা হয়েছে রেসবেরি পাই (Raspberry Pi), আরডোইনো মেগা (Arduino Mega) ও আরডোইনো ইউএনও (Arduino UNO)। রোবটটির জন্য খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। বিভাগের সব শিক্ষার্থী ও ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ এ টাকার যোগান দিয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি রোবট বানানোর কাজ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। টানা ১৫দিন কাজ করে ২৩ জানুয়ারি পরিপূর্ণ রোবট বানাতে সক্ষম হন তারা।

মানুষের স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য বেশ কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছে রোবটটিতে।  

মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল মানুষের শরীরের রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, হৃদস্পন্দন, কোলেস্টরল, ইউরিক এসিড ও ব্লাড সুগার পরিমাপসহ রোগ নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে সক্ষম। এজন্য রোবটটিতে যুক্ত করা হয়েছে বি.পি মনিটর, ই.সি.জি সেন্সর পালস্ অক্সিমেটরি সেন্সর, জি.সি.ইউ সেন্সর, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও থার্মাল স্ক্যানার। আর চলাফেলা করার জন্য ক্যামেরা ও আল্ট্রাসনিক সেন্সর লাগানো হয়েছে।

....ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এসব ফিচার ব্যবহারও করা হয়েছে। সবকটি ফিচারই যথাযথভাবে কাজ করেছে বলে দাবি করেছেন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। মাদকাসক্ত কাউকে শনাক্ত করতে এবং আগুন লাগার খবর দিতে রোবটটিতে নতুন ফিচার হিসেবে অ্যালকোহল ডিটেক্টর ও ফায়ার অ্যালার্ম যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। রোবটটি যে কোনো জায়গা থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস্ তৈরির কাজও করছে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী।

ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জানান, মেডিকেল রোবট দেশে আগে কখনও তৈরি হয়নি। আমরাই প্রথম এটি বানিয়েছি। সাধারণত একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যে ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয় তার সবগুলোই আমাদের রোবট দিয়ে করা সম্ভব। হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকলেও আমাদের এই রোবট যেন বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে সেজন্য আমরা এটিকে আরও আধুনিক ও উন্নত করার চেষ্টা করছি।

ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল মোন্নাফ জানান, যেহেতু মেডিকেল সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ নিয়ে আমাদের লেখাপড়া সেজন্যই আমরা এটি বানিয়েছি। এই রোবট মানুষের শরীরের অনেকগুলো পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে সক্ষম। এখনও এটি প্রাথমিক অবস্থায় আছে। আমরা রোবটটিকে আরও উন্নত ও আধুনিক করার জন্য কাজ করছি।

শিক্ষার্থীদের গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য বানানো হলেও ভবিষ্যতে আর্থিক সহযোগিতা পেলে মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল বাণিজ্যিকভাবে বানানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর আবুল কাশেম জানান, আমাদের শিক্ষার্থীদের বানানো রোবটটি বিভিন্ন বায়োমেডিকেল কাজ করতে পারে। এখন শিক্ষার্থীদের গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হলেও প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পেলে এটি বাণিজ্যিকভাবেও বানানো সম্ভব। রোগীর শারীরিক অবস্থা জানাসহ তার কাছে ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কাজটি খুব সহজভাবে করতে পারবে এ রোবট।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের স্বল্প সামর্থ্যের মধ্যে এ রোবট তৈরি করেছেন। যদি কেউ অর্থায়ন করেন তাহলে রোবটটিকে আরও কার্যকর করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে বাণিজ্যিকভাবেও এই রোবট তৈরি করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দেওয়া যাবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম বলেন, মেডিকেল রোবটের ধারণাটি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন। শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয়। যদি এ রোবট চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাজে আসে তাহলে আমরা এটিকে সানন্দে গ্রহণ করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।