ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিজয়ের মাসেই চ্যালেঞ্জিং পিলারে স্প্যান, প্রস্তুত আরও ৫টি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৯
বিজয়ের মাসেই চ্যালেঞ্জিং পিলারে স্প্যান, প্রস্তুত আরও ৫টি ডিসেম্বরেই স্প্যান বসবে ছয় ও সাত নস্বর পিলারে। ছবি: ডিএইচ বাদল

মাওয়া-জাজিরা থেকে ফিরে: ২০১৫ সালে বর্ষা মৌসুমে সাড়ে তিন থেকে চার মিটার/সেকেন্ড স্রোতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সাড়ে পাঁচ লাখ ঘনমিটারের দু’টি গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে ট্রায়াল সেকশনের কাজেও বিলম্ব হয়। এসময় জরুরি ভিত্তিতে নকশা অনুযায়ী ভরাট করতেও সময় লাগে যথেষ্ট। এর জন্য প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত ছয় মাস। এই ঘটনা পদ্মাসেতুর মাওয়া প্রান্তের, যেখানে ছয় ও সাত নম্বর পিলারের অবস্থান।

পিলার দু’টি নির্মাণ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এমনকি নকশাও পরিবর্তন করতে হয়েছে।

যার খেসারত হিসেবে আবারও সময় বাড়াতে হয়েছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্পের। তবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছয় ও সাত নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসবে বিজয়ের মাসের শেষদিকে।

জানা যায়, মাওয়া প্রান্তে পদ্মা নদীর স্রোত সবচেয়ে বেশি। বর্ষা মৌসুমে ২০০ ফুট গভীরতা সৃষ্টি হয় সেখানে। এ জায়গাতেই ছয় নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়ে এখন ঢালাই চলছে। পিলারের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। আর সাত নম্বর পিলারের কাজ ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। শুধু পিলারের ক্যাপে ঢালাই বাকি। এসব কাজ শেষ হলে ডিসেম্বরের শেষদিকে দু’টি পিলারেই বসবে স্প্যান।

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে পদ্মাসেতুর কাজ।  ছবি: ডিএইচ বাদল

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতুতে স্প্যান বসবে মোট ৪১টি। এর মধ্যে চীন থেকে সেতু এলাকায় স্প্যান এসেছে ৩১টি। সেখান থেকে ১৬টি স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো পিলারে বসানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রকল্প এলাকায় চারটি স্প্যানে রঙের কাজ চলছে, থ্রিডি অ্যাসেম্বলের কাজ চলছে তিনটি স্প্যানে। এছাড়া আরও তিনটি স্প্যানের সাব-অ্যাসেম্বল চলছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৪টির কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। পাইলিং শেষে ঢালাই বাকি আছে আটটি পিলারের। ছয় ও ৩০ নম্বর পিলারের বেজমেন্ট ঢালাই হয়ে গেছে। খরস্রোতা মাওয়া প্রান্তে আট ও ১০ নম্বর পিলারের সব কাজ শেষ হয়ে ঢালাই চলছে। এসব কাজ শেষ হলে ২০২১ সালের জুন মাসে উন্মুক্ত হবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু।

প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, সব চ্যালেঞ্জ জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে মূল সেতুর কাজ। আগামী বিজয়ের মাসের শেষের দিকে চ্যালেঞ্জিং ছয় ও সাত নম্বর পিলারে স্প্যান বসানো হবে। এ দু’টি পিলার নির্মাণ সবচেয়ে কঠিন ছিল। মাওয়া প্রান্তে সবসময় খরস্রোত থাকে। তার ওপর আবার এসব পিলারের মাটির নিচে নরম কাদা ছিল। এগুলো আমাদের কম ভোগায়নি। যে কারণে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। পাইলিং করতে গিয়ে অনেক সময় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো বালু দিয়ে ভরাট করেই ছয় ও সাত নম্বর পিলারের কাজ করতে হয়েছে। সব চ্যালেঞ্জ শেষে ডিসেম্বরেই পিলার দু’টির ওপর স্প্যান বসানো হবে।

২০২১ সালের জুন মাসে উন্মুক্ত হবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু।  ছবি: ডিএইচ বাদল

সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মূল সেতু নির্মাণে খরচ ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮৫ শতাংশ। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।  

প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু, পিলার নির্মাণ চ্যালেঞ্জসহ নানা কারণে সবশেষ একধাপে সময় বেড়েছে ১ বছর ৬ মাস। অর্থাৎ প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে ২০২১ সালের জুন মাসে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৯
এমআইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।