ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টাকার জন্যই মা-মেয়েকে হত্যা করে রাইজুদ্দিন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
টাকার জন্যই মা-মেয়েকে হত্যা করে রাইজুদ্দিন!

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর ৭মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ লাকী বেগম ও তার চার বছরের শিশুকন্যা হুমায়রা আক্তার আলিফাকে টাকার জন্যই জবাই করে খুন করা হয়। প্রথমে গৃহবধূ লাকী আক্তারকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে মেয়ে হুমায়রা আক্তার আলিফা মায়ের হত্যাকারীকে দেখে ফেলায় তাকেও হত্যা করা হয়। মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত রাইজুদ্দিন ১৬১ ধারায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব কথা জানান। 

সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় এতথ্য নিশ্চিত করেন। ঘটনার মাত্র ২০ ঘণ্টার মাথায় এ লোমহর্ষক ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলেও দাবি করেন এই পুলিশ সুপার।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সঞ্জিত কুমার রায় জানান, রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে টাঙ্গাইল পৌরসভার ভাল্লুককান্দি (এয়ারপোর্ট) এলাকার ৭মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ লাকী বেগম ও তার চার বছরের শিশুকন্যা হুমায়রা আক্তার আলিফার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। পরে এ বিষয়ে নিহত লাকী বেগমের বাবা মো. হাসমত আলী বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা (নং-১৫, তাং-১৩/১০/২০১৯ইং, ধারা-৩০২/৩৪দ.বি.) দায়ের করেন।

ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি দক্ষিণ) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ঘটনা উদ্ঘাটনে সদর থানার পক্ষ থেকে একটি, গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পক্ষ থেকে একটি দল গঠন করা হয়। মোট তিনটি পৃথক দল যৌথভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও সোর্সিংয়ের মাধ্যমে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পৌরসভার ভাল্লুককান্দি এলাকা থেকে সদর উপজেলার চরপাতুলীপাড়া গ্রামের মৃত সুকুম উদ্দিনের ছেলে রাইজুদ্দিনকে (৩৬) আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। রাইজুদ্দিনের দেখানো বসতবাড়ির মুরগীর খোঁয়াড় থেকে সাত লাখ ৭৭ হাজার টাকা ও ঘরের ভেতর থেকে ১৯ হাজার ৫০০টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি টাকা দিয়ে তিনি মোবাইল ফোন কিনেছেন বলে জানান।

পুলিশের কাছে দেওয়া প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে রাইজুদ্দিন জানান, নিহত লাকী বেগমের স্বামী আলামিন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি আগে ফলমূলের ও ফ্ল্যাক্সিলোডের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তিনি এক প্রকার বেকার দিন কাটাচ্ছিলেন। তার টাকার খুব প্রয়োজন ছিল। বন্ধুত্বের সুবাদে আলামিনের টাকা-পয়সা সম্পর্কে তার ধারণা ছিল। আলামিন-লাকী বেগমের বাড়িতে তার যাতায়াতও ছিল। আলামিনের অনেক টাকা-পয়সা দেখে তার লোভ হয়। ঘটনার দিন রাতে রাইজুদ্দিন ছুরি নিয়ে ওই বাড়িতে যান। দরজা খুলে দেওয়ার পর তিনি ঘরে ঢুকে প্রথমে লাকী বেগমকে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় তার চার বছরের মেয়ে আলিফা এসে রাইজুদ্দিনকে দেখে ফেলে। তখন আলিফাকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন রাইজুদ্দিন। পরে ছুরিটি পাশের জমিতে ফেলে দিয়ে আট লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি চলে যান। রাতে বাড়ি ফিরে গোসল করেন। পরদিন রোববার সকালে অন্য সবার সঙ্গে মা-মেয়ের মরদেহ দেখতে টাঙ্গাইল থানায় যান এবং প্রায় সব সময় নিহত লাকী বেগমের স্বামী আলামিনের সঙ্গে থেকে মামলা দায়েরের তদারকি করেন।

পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, রাইজুদ্দিন খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। ঘটনার পর তিনি খুবই স্বাভাবিক আচরণ করছিলেন এবং মামলা দায়ের করার বিষয়ে তদারকি করতে পুলিশের কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলের পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ভাল্লুককান্দী এলাকার ফ্ল্যাক্সিলোড ব্যবসায়ী আলামিনের ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লাকী বেগম (২২) ও তার চার বছরের শিশুকন্যা হুমায়রা আক্তার আলিফাকে শনিবার (১২ অক্টোবর) দিনগত গভীর রাতে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও জবাই করে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।