ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বুয়েটছাত্র ফাহাদ হত্যা: জট খুলবে সিসিটিভি ফুটেজে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৯
বুয়েটছাত্র ফাহাদ হত্যা: জট খুলবে সিসিটিভি ফুটেজে

বুয়েট থেকে: বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার সময়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মুছে ফেলার অভিযোগ উঠেছে হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলের আশেপাশের একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা বের করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের নিচতলার সিঁড়ির উপর থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ফাহাদ বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়।  

শিক্ষার্থীদের দাবি, সিসিটিভির ফুটেজে মুছে ফেলা হলেও সেটা রিকভার করা সম্ভব।

তাই সিসিটিভির ফুটেজ না দেখানো পর্যন্ত হলের প্রভোস্ট কার্যালয়ের সামনে থেকে না সরার ঘোষণা দিয়েছেন ফাহাদের ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী।

ফাহাদ হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। নামপ্রকাশ না করার শর্তে তার কক্ষের একজন বাংলানিউজকে বলেন, হলে রাতে যখন আসি তখন শুনি তাকে (ফাহাদ) আমাদের ব্যাচমেটরা নিয়ে গেছে। এজন্য আমরা কিছু মনে করিনি। পরে ১৭ ব্যাচের আরাফাত আমাদের খবর দেয় যে, আবরার সিঁড়িতে পড়ে আছে। তখন আমরা গিয়ে দেখি তোশকের ওপর তার মরদেহ।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই শিক্ষার্থী বলেন, তাকে শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে দেখিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাশ্মীর এবং ভারত নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে দেখেছি। এছাড়া মাঝে মাঝে তাবলীগ জামাতের প্রোগ্রাম যেত। সেটা তো দোষের কিছু নয়।
শেরে বাংলা হল, ছবি: বাংলানিউজফাহাদকে মারধর করা হয় হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে। মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু। তিনি বলেন, ‘ফাহাদকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেজে তার লাইক দেওয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই।

‘তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরবর্তীতে প্রমাণ পাওয়ার পরে চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো তারা মারধর করে থাকতে পারেন। পরে রাত ৩টার দিকে শুনি ফাহাদ মারা গেছে। ’

অপরদিকে ২০১১ কক্ষে থাকা তৃতীয় বর্ষের সবাই হল ছেড়ে চলে গেছে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করছেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুয়েট ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ও শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাসেল ও সহ-সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হেফাজতে নিয়েছে।

তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে চাননি ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দুজন শিক্ষার্থীকে নেওয়া হয়েছে, তারা এ হলের শিক্ষার্থী। তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না।
শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ, উদ্ধার করা লাঠি ও হলের নিচতলার সিঁড়ি, ছবি: বাংলানিউজ কৃষ্ণপদ রায় বলেন, প্রাথমিক তদন্তে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছি। আমরা যতগুলো সিসিটিভির ফুটেজ আছে সবগুলো সংগ্রহ করেছি। ফুটেজগুলো অত্যন্ত স্বচ্ছ। এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে কোনো দলের এসব বিবেচনায় আসবে না।

এদিকে ঘটনাস্থলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাহাদের আত্মীয়-স্বজনেরা। তার ফুপাতো ভাই ইফতেখার বাংলানিউজকে বলেন, ফাহাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়, কেন তাকে মরতে হবে? আমাদের পরিবার কেউ কোনো পলিটিক্সের সঙ্গে জড়িত না। আর সে যদি শিবির করতো, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তি দিত। ছাত্রলীগ কেন পিটিয়ে মারবে?

ফাহাদের বোন সানজিদা জানান, ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে তার পরিবারের অনেকে জ্ঞান হারিয়েছেন। সে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন তো দূরের কথা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত না। আমাদের পরিবারের কেউ-ই পলিটিক্স করে না।

ফাহাদের খালাতো ভাই তালহা বলেন, সে খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। এই ছেলেকে কেউ এভাবে হত্যা করবে বিশ্বাস করতে পারছি না।

হলে অনেক শিক্ষার্থী ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে দুটো স্ট্যাটাস তার টাইমলাইনে দেখা যায়। এর আগে তিনি কাশ্মীর ইস্যুতেও লেখালেখি করেন।

এ ঘটনায় হল প্রাধ্যক্ষ জাফর ইকবাল খান আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি।

** বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহাদ হত্যার ঘটনায় আটক ২
** বুয়েটের হলে ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৯
এসকেবি/ওএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।