ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সৌন্দর্যে ‘দেশসেরা’ নরসিংদীর প্রতিমা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
সৌন্দর্যে ‘দেশসেরা’ নরসিংদীর প্রতিমা

নরসিংদী: শিল্পীদের নৈপুণ্যে বাড়ছে নরসিংদীর মৃৎশিল্পীদের তৈরি প্রতিমার কদর। সৌন্দর্যে দেশসেরা হওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চাহিদা রয়েছে নরসিংদীর প্রতিমার। আসন্ন দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে প্রায় ৪০০টি প্রতিমা তৈরি করছেন নরসিংদীর মৃৎশিল্পীরা। যার বাজারদর প্রায় দুই কোটি টাকা।

ষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গাকে পূজামণ্ডপে পৌঁছে দিতে কাজ চলছে দিনরাত। তবে কয়েক বছর ধরে প্রতিমার উপকরণের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত মুনাফা পাচ্ছেন না বলে জানান এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আগামী ০৪ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পূজা।

জানা যায়, আগে মৃৎশিল্পীরা তাদের বসতবাড়িতে প্রতিমা তৈরি করতেন। তবে আশির দশকে নরসিংদীর পাঁচদোনা গ্রামের মৃৎশিল্পী বলরাম পালের হাত ধরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অন্য জেলার চেয়ে নরসিংদীর মৃৎশিল্পীদের তৈরি প্রতিমা গঠন ও কারুকার্যে নজরকাড়া। তাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়তে থাকে নরসিংদীর প্রতিমার কদর। বলরাম পালের ব্যবসায়িক সাফল্যে নব্বইয়ের দশকে জেলায় দ্রুত প্রসার ঘটে এ শিল্পের। দুই দশকের ব্যবধানে নরসিংদীতে প্রায় ১৯টি প্রতিমা শিল্পালয় গড়ে উঠেছে।  

এরমধ্যে নরসিংদী শহরে ছয়টি, সদর উপজেলার পাঁচদোনায় চারটি, শিবপুরের যোশরে তিনটি, পলাশে দুটি, রায়পুরায় দুটি ও মনোহরদীতে দুটি প্রতিমা শিল্পালয় রয়েছে। এতে প্রায় দেড় শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। পাশাপাশি ভারত থেকেও মৃৎশিল্পীরা চুক্তিতে এসব প্রতিমা শিল্পালয়ে কাজ করছেন।  

এ বছর নরসিংদীর বিভিন্ন কারখানায় ও ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ৪০০টি প্রতিমা তৈরি হয়েছে। আকার ও গঠনভেদে ৩০-৮০ হাজার টাকায় এসব প্রতিমার কার্যাদেশ নেওয়া হয়েছে।

পাঁচদোনা বাজারের শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ প্রতিমা শিল্পালয়ের মালিক বলরাম পাল বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর আমার তৈরি প্রতিমা ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে যাচ্ছে। এসব প্রতিমা তৈরি করতে স্থানীয় কারিগরের পাশাপাশি ভারত থেকে আসা দুইজন কারিগরও কাজ করছেন। তবে গত কয়েক বছরে প্রতিমা তৈরির প্রধান উপকরণ রং থেকে শুরু করে মাটি, খড় ও বাঁশ-সব কিছুরই দাম বেড়েছে। বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরিও। কিন্তু প্রতিমার দাম বাড়েনি।

নরসিংদীর শিল্পীরা জানান, গত বছর মাটির দাম প্রতি ট্রলি ৩০০০ টাকা ছিল। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে চার হাজার টাকা। একজোড়া বাঁশের দাম বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। খড়ের দামও দ্বিগুণ হয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্য, খড়, মাটি ও রঙের দাম পাউন্ড প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে, শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে।

শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়া এলাকার দিপু প্রতিমা শিল্পালয়ের মালিক দিলীপ পাল বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর দুর্গাপূজার বাজেট বাড়লেও পূজার উদ্যোক্তারা প্রতিমার বাড়তি দাম দিতে চাচ্ছেন না। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে প্রতিমা তৈরি করলেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত লাভ হচ্ছে না।  

তিনি আরও বলেন, এ বছর আমরা ৩৫টি প্রতিমা তৈরি করেছি। যার দাম গঠনভেদে ৪০-৮০ হাজার টাকা।

প্রতিমা শিল্পালয়গুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মৃৎশিল্পীরা এখন দুর্গা দেবীকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে রং-তুলির আঁচড় দিতে পুরোদমে ব্যস্ত। তাই প্রতিমা শিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

মৃৎশিল্পী নিখিল চন্দ্র পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাজটা মৌসুমি কেন্দ্রিক। প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা বেতনে তিন মাসের জন্য চুক্তিতে কাজ করছি।

নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, মৃৎশিল্পীদের হাতের নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করে প্রতিমার সৌন্দর্য। মানে ভালো ও দামে কম হওয়ায় নরসিংদীর প্রতিমার চাহিদা দেশজুড়ে। এ বছর নরসিংদীর ৩৫৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।