ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেদে শিশুদের বিড়ম্বনার শিকার ঘরমুখো যাত্রীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৯
বেদে শিশুদের বিড়ম্বনার শিকার ঘরমুখো যাত্রীরা পথ আগলে টাকা চায় বেদে শিশুরা। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: দেশের অন্যতম ব্যস্ত নৌরুট কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া। ঈদ এলেই এ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সম্প্রতি এ ঘাটজুড়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে একদল বেদে শিশুদের। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিঘাটে প্রশিক্ষিত এ বেদে শিশুদের আনাগোনা বেশি চোখে পড়ে। ঘরমুখো মানুষের পথ আগলে টাকা দাবি করে তারা। না দেওয়া পর্যন্ত পিছু ছাড়বে না। শার্ট বা ব্যাগ টেনে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা তাদের। 

বেদে শিশুদের এ ধরনের আচরণে বিব্রত হন যাত্রীরা। অনেকে রাগ করে ধমকও দেন।

তবে যাত্রীদের বিরক্তি, ক্ষোভ বা ধমক কিছুই ছোঁয় না বেদে শিশুদের। একজনকে ছেড়ে আরেকজনকে ধরে। যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিতে হবে, এর জন্য লঞ্চ-ফেরি ঘাটে ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকে তারা। যেন শিকারের অপেক্ষায় ওৎ পেতে থাকা এক দল শিকারি!

জানা গেছে, রোজার ঈদের সময় কাঁঠালবাড়ী ঘাটের পাশে খোলা জায়গায় অস্থায়ী বসতি গড়ে বেদে সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো। কোরবানির ঈদ শেষে আবার চলে যায়। মূলত ঈদ মৌসুমে ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ভিড়কে কাজে লাগায় তারা। সুযোগ বুঝে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। ঘরে ফেরার তাড়ায় বেদে শিশুরা পথ আগলে দাঁড়ালে দ্রুত ১০-২০ টাকা দিয়ে মুক্ত হতে চান যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, লঞ্চ বা ফেরি থেকে যাত্রীদের নামার অপেক্ষায় লঞ্চঘাটের টার্মিনালে ও ফেরি ঘাটের পন্টুনে দাঁড়িয়ে আছে বেদে শিশুরা। যাত্রীরা নেমে আসলেই দ্রুত ছুটে যাচ্ছে তাদের কাছে। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাত্রীদের পথ আটকে দাঁড়াচ্ছে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত ছাড়াছাড়ি নেই! যাত্রীরা এগিয়ে যেতে চাইলে পেছন থেকে শার্ট বা ব্যাগ টেনে ধরছে। নৌযান থেকে নেমে গন্তব্যের পরিবহনে ওঠা পর্যন্ত কয়েক দফায় বেদে শিশুদের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

গোপালগঞ্জগামী একটি পরিবার জানায়, ফেরি থেকে নামতেই বেদে শিশুদের দল ঘিরে ধরে। এতে ভয় পেয়ে আমাদের ছোট বাচ্চারা চিৎকার করে ওঠে। দশ টাকা দেওয়ার পরও দাঁড়িয়ে থাকে, আরও চায়। রীতিমতো অসহ্য ব্যাপার!

টাকা না দেওয়া পর্যন্ত পিছু ছাড়তে চায় না বেদে শিশুরা।  ছবি: বাংলানিউজ

মাসুম নামে এক যাত্রী বলেন, লঞ্চ থেকে নেমে টার্মিনালে যেতেই চার-পাঁচ শিশুর একটি দল ঘিরে ধরে। টাকা চায়। টাকা দিতে পকেটে হাত দিয়ে দেখি, ভাঙতি নেই। পঞ্চাশ টাকার নোট। বেদে শিশুদের হাতের মুঠোতে দশ টাকার নোট ছিল। আমি পঞ্চাশ টাকা হাতে ধরে চল্লিশ টাকা দিতে বলি। একজন আমার হাত থেকে টাকা নিয়ে দৌঁড়ে ভিড়ের মধ্যে চলে যায়!

ঘাটের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘাট এলাকায় বেদেনীদের দলও রয়েছে। তবে, যাত্রীরা বড়দের টাকা দিতে চায় না। এ জন্যই কয়েকদিন ধরে বাচ্চাদের বেশি দেখা যাচ্ছে। বড়দের চেয়ে উপার্জন বেশি দেখে শিশুদের কাজে লাগাচ্ছে বেদেনীরা।

এ বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন বেদেনীর সঙ্গে। তারা বলেন, বাড়তি আয়ের জন্যই বাচ্চাদের ঘাটে নামানো হয়েছে। সারাদিন খেলাধুলা করে সময় কাটানোর চেয়ে ঘাটে ঘুরে যদি কিছু পায়, ক্ষতি কি!

ভাসমান জীবন বেদেদের। তবে, প্রাচীন এ জীবনধারা থেকে এখন বের হয়ে আসছেন অনেকেই। শিবচরের বিভিন্নস্থানে অনেক বেদে পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। তাদের শিশুরাও স্কুলে যাচ্ছে। তবে, জীবনমানে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি বেদেদের। পৈত্রিক পেশায় আয়-রোজগার কমে গেছে। বাধ্য হয়েই ঘাট এলাকায় পথচারীদের পথ আগলে চেয়ে-চিন্তে দশ-পাঁচ টাকা নিতে হচ্ছে বলে জানান বেদেরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।