ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাঙ‌নে শেষ সম্বল হা‌রি‌য়ে দি‌শেহারা ফি‌রোজা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
ভাঙ‌নে শেষ সম্বল হা‌রি‌য়ে দি‌শেহারা ফি‌রোজা

টাঙ্গাইল: স্বামী, দুই ছে‌লে ও দুই মে‌য়ে নি‌য়ে সংসার চল‌ছিল ফিরোজা বেগমের। স্বামী রোশনালী ভ্যান চা‌লা‌তেন। ক‌য়েক মাস আ‌গে রোশনালী হৃদ‌রো‌গে আক্রান্ত হ‌য়ে মারা যান। ঘরের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীর মৃত্যুর পর অভাব-অনটন নে‌মে আ‌সে ফি‌রোজা বেগমের সংসারে। তবু সংগ্রাম চলছিল তার। শেষ সম্বল হি‌সে‌বে বা‌ড়ির ৮ শতাংশ জায়গার ম‌ধ্যে একটি কুঁড়ে ঘ‌র ছিল।

কিন্তু যমুনার করাল গ্রা‌স কেড়ে নিয়েছে ফিরোজার সে ঘরটিও। গত ২০ দি‌নে যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙ‌নে বিলীন হ‌য়ে গে‌ছে তার আশ্রয়স্থলটি।

শেষ সম্বলটুকু হা‌রি‌য়ে এখন দি‌শেহারা টাঙ্গাই‌লের ভুঞাপুর উপ‌জেলার কষ্টাপাড়া গ্রা‌মের বিধবা ফি‌রোজা। চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খোলা আকা‌শের নি‌চে মানবেতর জীবন যাপন কর‌তে হচ্ছে তাকে। কোথায় আশ্রয় নেবেন, কার কাছে যাবেন, কিছুই কূল পাচ্ছেন না তিনি।

কেবল ফিরোজাই নন, যমুনার সর্বনাশা ভাঙন এভাবে পথে বসিয়েছে ভুঞাপুর উপ‌জেলার গো‌বিন্দাসী ইউ‌নিয়‌নের কষ্টাপাড়া, ভালকু‌টিয়া ও খানুরবা‌ড়ি এলাকার তিন শতা‌ধিক প‌রিবারকে। গাবসারা ও অজুর্না ইউ‌নিয়‌নের বলরামপুর, তারাই, চর তারাই এলাকায় ফসলি জ‌মিও গিলে নিচ্ছে যমুনার তীব্র স্রোত।

ভাঙন‌রো‌ধে টাঙ্গাই‌লের পা‌নি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকর কোনো উ‌দ্যোগ নেয়নি বিধায় নদীপাড়ের বাসিন্দাদের এই বিপদে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।  

ত‌বে দেড় কি‌লো‌মিটার এলাকায় ভাঙন হলেও ৭৫ মিটার এলাকায় ভাঙন‌রো‌ধে ৫০ লাখ টাকার ব্যা‌য়ে কাজ শুরু ক‌রে‌ছে কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, ছোট ছোট আকা‌রে প্রকল্প পাস কর‌তে হ‌চ্ছে। কারণ বড় প্রকল্প দি‌লে সেগু‌লো পাস হয় না। তাই ভাঙন‌রো‌ধে কাজ ধীরগ‌তি হ‌চ্ছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) যমুনা নদীর ভুঞাপুর অং‌শে পা‌নি বিপদসীমার ১৫ সে‌ন্টি‌মিটারের উপর দি‌য়ে প্রবা‌হিত হ‌চ্ছিল। তিন‌টি গ্রা‌মকে বন্যা থে‌কে রক্ষার জন্য সোমবার রা‌তে এলাকাবাসী যমুনা নদীর পা‌ড়ে মা‌টি ও বস্তা ফে‌লে‌ছে।  

ত‌বে ভাঙ‌নের কব‌লে গৃহহারা মানুষ‌দের সহায়তায় সরকা‌রি বা বেসরকা‌রি কোনো উ‌দ্যোগ দেখা যায়নি তখনো।  

ভুঞাপুর উপ‌জেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ জানান, যমুনা নদীর গো‌বিন্দাসীর তিনগ্রা‌মে ভাঙন অব্যাহত র‌য়ে‌ছে। গৃহহারা‌দের তা‌লিকা তৈ‌রি করা হ‌চ্ছে। তা‌দের সহায়তার জন্য প্র‌য়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

টাঙ্গাই‌লের পা‌নি উন্নয়ন বো‌র্ডের নির্বাহী প্র‌কৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর ভুঞাপুর অং‌শে বিপদসীমার ১৫ সে‌ন্টি‌মিটার ওপর প্রবা‌হিত হ‌চ্ছে পানি। ভাঙন‌রো‌ধে জিও ব্যাগ ফেলা‌নো হচ্ছে। নতুন ক‌রে আরও ৭৫  মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা‌নোর কাজ শুরু হ‌বে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।