ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তানিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলায় কাউন্টার মাস্টারের জবানবন্দি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
তানিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলায় কাউন্টার মাস্টারের জবানবন্দি

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বাসের কাউন্টার মাস্টার রফিকুল ইসলাম রফিক (৩০)।

বুধবার (১৫ মে) বিকেলে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন এর কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন রফিকুল। জবানবন্দি শেষে তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে, বুধবার (১৫ মে) বিকেলে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে রফিকুল ইসলাম রফিকে কিশোরগঞ্জ আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ।
 
কিশোরগঞ্জ আদালত পরিদর্শক মো. তফিকুল ইসলাম তৌফিক বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

এদিকে ৮ দিনের রিমান্ডে থাকা অপর দুই আসামি খোকন মিয়া (৩৮) ও বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুলকে (৫০) রিমান্ড শেষে একই আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের বিচারক উভয়কে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিল এবং তানিয়াকে কিভাবে বাস থেকে নামিয়ে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়-এর বিবরণ দেন রফিক। তবে তিনি নিজে ধর্ষণ বা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।
 
এর আগে শনিবার (১১ মে) বাসের চালক নূরুজ্জামান নুরু (৩৯) কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন এর কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এরপর মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুনের কাছে তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন স্বর্ণলতা বাসের হেলপার লালন মিয়া (৩২)।

জবানবন্দিতে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯), হেলপার লালন মিয়া (৩২) ও নূরুজ্জামানের খালাতো ভাই বোরহান মিলে যাত্রী তানিয়াকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করেন বলে জানা গেছে।

এর আগে বুধবার (৮ মে) বিকেল ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন রিমান্ড শুনানি শেষে পাঁচ আসামির প্রত্যেকের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন-গাজীরপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯), একই উপজেলার বীরউজলী গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে বাসের হেলপার লালন মিয়া (৩২) একই উপজেলার লোহাদী গ্রামের নজর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিক (৩০), কটিয়াদী উপজেলার ভোগপাড়া এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩৮) এবং বাজিতপুর উপজেলার নীলক্ষি গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদ ভূঁইয়ার ছেলে বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুল (৫০)।  

এর আগে মঙ্গলবার (৭ মে) দিনগত রাতে নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে চার জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে ওই তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যুর আলামত মিলেছে। এছাড়া ডিএনএ ও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ওইদিন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড ওই তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। পরে রাতেই তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তানিয়ার বড় ভাই মরদেহ বুঝে নেন।  

সোমবার (৬ মে) রাতে শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়ার ঢাকা থেকে বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার গজারিয়া-জামতলী এলাকায় ওই তরুণী ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

এ ঘটনায় বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার (সহকারী) লালন মিয়াসহ মোট পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। নিহত তানিয়া উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  

এদিকে রোববার (১২ মে) বিকেলে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও মাথার পিছনে আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।  

তানিয়ার গণধর্ষণ ও হত্যার বিষয় নিয়ে গত রোববার (১২ মে) বিকেলে জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রেস ব্রিফিং করেন।  
 
ওই সময় তিনি বলেন, বাসের চালক নূরুজ্জামান নুরুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বক্তব্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।  

তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অন্য বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।  

এর আগে, ওই দিন তিনি ঘটনাস্থল ও বাজিতপুর থানায় যান এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেন।  

বাংলাদেশ সময় : ০২৪০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।