ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাটে লোকসান শুনতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৯
পাটে লোকসান শুনতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ফটো

ঢাকা: বিপুল সম্ভবনাময় পাট শিল্পে গবেষণা ও পণ্যবহুমুখীকরণের পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাটে লোকসান শুনতে চাই না।

বুধবার (মার্চ ০৬) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পাট দিবস-২০১৯ উদযাপন, পুরস্কার বিতরণী এবং পাটপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

** দেশজুড়ে জাতীয় পাট দিবস পালন

শেখ হাসিনা বলেন, পাট এমন একটি পণ্য যার কিছুই ফেলা যায় না- এটাতে লোকসান কেন হবে? আমরা লোকসান শুনতে চাই না।


 
পাটখাতে অবদান রাখায় স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিতিনি বলেন, পাটকে লাভজনক কিভাবে করা যায়, সেটা দেখতে হবে। কৃষি পণ্য হিসেবে পাটজাত পণ্য একটা প্রণোদনা পাবে। আবার এটা যখন শিল্প-কারখানায় যাচ্ছে যেহেতু রপ্তানিমুখী পণ্য সেই রপ্তানির অন্যান্য পণ্য যে প্রণোদনা পায় পাটজাত পণ্যও সেই প্রণোদনা পাবে। পাশাপাশি আমার দেশে প্রয়োজনের চাহিদাটা কত দেখতে হবে।
 
পাট নিয়ে আরও বেশি গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটের ওপর প্রচুর গবেষণা প্রয়োজন, বিশেষ প্রণোদনাও প্রয়োজন। আমরা সেটা করে যাচ্ছি।
 
‘এই সোনালী আঁশ আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে,’ যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

হতাশাবাদীদের সঙ্গে নেই, আমি আশাবাদী
 
পাট খাতের সম্ভবনার কথা তুলে ধরে এবং করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত হতাশ হওয়ার কী আছে? লোকসান, লোকসান করবো কেন? আমি হতাশ পার্টির সঙ্গে না, আমি সব সময় আশাবাদী। আমি মনে করি আমাদের দেশের পাটের প্রতিটি জিনিসই কাজে লাগে।
 
পাট দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিতিনি বলেন, নতুন পাটজাত পণ্য আবিষ্কার করে এটাকে আমরা অবশ্যই লাভজনক করতে পারবো-এটা আমি বিশ্বাস করি। পাটের সোনালী দিন আবার ফিরিয়ে আনতে পারবো বলে মনে করি।
 
পাটের বহুমুখী ব্যবহারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পাটের কোনো কিছুই ফেলা যায় না। পাটের পাতা- এটা ভালো সবজি। পাট শাকে আয়রণ বেশি, পাট শাক ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি, জ্বরসহ নানা ধরনের রোগের প্রতিষেধক; আবার পাটের পাতা মাটিতে পড়লে সেখানকার উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এখন অবশ্য পাটের চা-ও আবিষ্কার হয়েছে। পাটখড়ির মূল্য আছে। পাটখড়ি থেকে ফার্নিচার হচ্ছে, জ্বালানিসহ বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে পাটখড়ির।
 
‘পাটের কোনো কিছুই ফেলা যায় না। এর সব কিছুই কাজে লাগে। ’
 
পাটের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট আমাদের একটি কৃষি পণ্য। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পাট আমাদের শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পাট আমাদের রপ্তানি যোগ্য পণ্য। এই পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে এক সময় পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তার সিংহ ভাগ রপ্তানি আয় আসতো এই পাট থেকে।
 
পাটপণ্য মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিকৃত্রিম তন্তু পাটের বাজারকে একেবারে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ এখন পরিবেশ সর্ম্পকে যথেষ্ট সচেতন, যেটি আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে পরিবেশবান্ধব পণ্য পাট। এর বিরাট সম্ভাবনা আমাদের সামনে আছে।
 
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাটগাছের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি কার্বন শোষণ করে পাট ক্ষেত। এদিক থেকেও পরিবেশ রক্ষায় বিরাট অবদান রাখে।
 
‘সোনালী ব্যাগ’ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে
 পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে পাটের তৈরি সম্ভবনাময় ‘সোনালী ব্যাগ’ রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোনালী আঁশ পাট-যার থেকে সোনালী ব্যাগ থেকে অন্যান্য পণ্য হচ্ছে এটাকেও আরো বেশি ব্র্যান্ডিং করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে। তাহলেই বিরাট মার্কেট আমরা পেয়ে যাবো। পাট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আরও ব্যাপকভাবে অর্জন করা যাবে।
 
পাটপণ্য মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিতিনি বলেন, পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প তৈরি করা হয়েছে। এটি মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। এটি পলিথিনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করবো। এটা যদি আরও ব্যাপকভাবে উৎপাদন করতে পারি বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো এবং নিজেদের দেশেও ব্যবহার করতে পারি। এটি পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে যথেষ্ট কাজ লাগে। আর সোনালী ব্যাগের উৎপাদন আমাদের আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পাটখাতের উন্নয়নে অবদান রাখা সেরা ১৪ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- এ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম, সচিব মো. মিজানুর রহমান।
 
পরে প্রধানমন্ত্রী পাটপণ্য মেলা ঘুরে দেখেন। মেলায় প্রধানমন্ত্রী পাটের সোনালী আঁশ দিয়ে তৈরি ‘সোনালী ব্যাগ’সহ বিভিন্ন পণ্য হাতে নিয়ে দেখেন।
 
দুই দিনব্যাপী এ মেলা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্য্ন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে।
 
মেলায় পাটের সুতোয় তৈরি শাড়ি, অন্য পোষাক, দাবা খেলার ঘর, ভ্যানিটি ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, জুতো, ফুলদানি, পাটের চা, রূপচর্চার সামগ্রী, পাট থেকে উন্নত তন্তু, সোফা, টুল, টেবিল, ট্রে, ঝুড়ি, ডাস্টবিন, গৃহসজ্জার বিভিন্ন সরঞ্জামসহ দৃষ্টি নন্দন, পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পাট ও পাটজাত পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৯/আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা
এমইউএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad