ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দৃশ্যমান হলো পদ্মাসেতুর ৯০০ মিটার 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
দৃশ্যমান হলো পদ্মাসেতুর ৯০০ মিটার  সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর বসেছে ষষ্ঠ স্প্যানটি। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সিগঞ্জ: 'পদ্মাসেতু'র উপর দিয়ে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার পথে। জাজিরা প্রান্তে সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর ষষ্ঠ স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) '৬এফ' বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো ৯০০ মিটার। 

৫ম স্প্যান বসানোর দীর্ঘ ছয় মাস পর বসলো এ স্প্যানটি। নতুন সরকার আর নতুন বছরের শুরুতে 'আর কোনো জটিলতা নেই পদ্মাসেতুর পিলারের' এ খবরের পাশে যোগ হলো জাজিরা প্রান্তে ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হওয়ার খবরও।



বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। স্প্যান বসানোর কার্যক্রম দেখে আনন্দিত পদ্মাপাড়ের মানুষ।

সেতুর ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ পিলারের ওপর ৭টি স্প্যানে এখন দৃশ্যমান প্রায় এক কিলোমিটার অবকাঠামো।

এর আগে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সকালে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে রওনা দিয়ে স্প্যানটি বিকেলে জাজিরা প্রান্তে কাঙ্ক্ষিত পিলার এলাকায় আসে। স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার আর ওজন তিন হাজার ১৪০ টন। তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ক্রেন 'তিয়ান ই' স্প্যানটি বহন করে আনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে জানান,  পাঁচটি স্প্যান বসানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সকাল থেকে এই স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এর আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ওয়েট টেস্ট, ট্রায়াল লোড টেস্ট, বেজ প্লেট, পাইল পজিশন,  মেজারমেন্টসহ আনুষাঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে শেষ হয়।

স্প্যান বহনকারী ক্রেনটিকে পিলারের ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের পজিশন অনুযায়ী রাখা হয়। এরপর লিফটিং ক্রেনের সাহায্যে রাখা হয় পিলারের ওপর। পুরোপুরি স্থায়ীভাবে স্প্যান বসে যেতে সময় লাগবে আরো কয়েকদিন। মডিউল ছয় এর প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছে আজ।

পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে অস্থায়ী বেয়ারিংয়ের ওপর রাখা হয়েছে স্প্যানটিকে। ওয়েল্ডিং করে পঞ্চম স্প্যানের সঙ্গে জোড়া দেওয়া হবে। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় জটিলতা ছাড়াই সফলভাবে বসানো হয় “৬এফ” স্প্যানটি। তবে নাব্যতা সঙ্কটের কারণে বাড়তি সময় লেগেছে স্প্যান বসাতে। ছোট বড় মিলিয়ে ১৫টি ড্রেজার কাজ করেছে পলি অপসারণে।

প্রকৌশলী সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, অন্য স্প্যান বসানোর সময়ের হিসেবে এই স্প্যানটি বসতে বেশি সময় লেগেছে। নদীতে পানি কমে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। পলি জমে তলদেশের গভীরতা কমে যাওয়ায় ড্রেজিং করে গভীরতা বাড়াতে হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলার এলাকায় ড্রেজিং করা হয়েছে।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৬৩ ভাগ। মূল সেতুর অগ্রগতি শতকরা ৭৩ ভাগ, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি শতকরা ৫০ ভাগ ও মোট ২৬১টি পাইলের মধ্যে ১৯১টি পাইলের কাজ শেষ এবং আরও ১৫টি পাইলের আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। মোট পিলার ৪২টি, এর মধ্যে ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। ১৫টি পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ১৭টি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে।

জানা যায়, মাওয়া প্রান্তে পদ্মাসেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর একটি স্প্যান রাখা হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে বসিয়ে দেওয়া স্প্যানে এ পর্যন্ত ১২৮টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসেছে। রেল লাইনের জন্য ২ হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৩০৫টি স্ল্যাব তৈরি হয়েছে। আর ২২ মিটার দৈর্ঘ্যের রোডওয়ে স্ল্যাব প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের দু’পাড়েই এই রোডওয়ে স্ল্যাব তৈরি হয়েছে ২৮০টি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় ৪ মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর দেড় মাস পর ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। আর বুধবার (২৩ জানুয়ারি) ৬ মাস ২৫ দিনের মাথায় বসলো ষষ্ঠ স্প্যানটি। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা  জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।