এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো বগুড়া থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। এমনকি জেলার স্থানীয় কোনো রুটে বাস চলাচল করছে না।
শনিবার (০৪ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় গেলে একাধিক চালক, চালকের সহকারী, সুপারভাইজার, চেইন মাস্টারসহ যাত্রী সাধারণের সঙ্গে কথা হয়।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে চালক আতাউর রহমান জানান, সাংবাদিকদের সঙ্গে সত্য কথা বড়ই মুশকিল। এতে তার জীবনের ওপর হুমকি আসতে পারে। অনেকটা হুমকি মাথায় নিয়ে তিনি জানান, সারাদেশের কথা বলতে পারবো না।
তিন যুগের চালক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এ জেলার মাত্র ১৫ ভাগ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। বাকিদের কোনো লাইসেন্স নেই। এ কারণে রাস্তায় বাস চালাতে গেলে ছাত্ররা গাড়ি ঠেকাবে। লাইসেন্স দেখতে চাইবে। এ ভয়ে এসব চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি বাঁচাতে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে- যোগ করেন চালক আতাউর রহমান।
তিনি আরও জানান, আজকের এ সমস্যার জন্য সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দায়ী। গাড়ির বয়স ২০ বছর পার হয়ে গেলেও শুধু রং-চং করে নিয়ে গেলে আবার নতুন নম্বর প্লেট দিয়ে দেয়। বগুড়ায় প্রায় ১৫ হাজারের মতো গাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে ১০ হাজার গাড়ির এ অবস্থা। কিন্তু বিআরটিএর কর্মকর্তাদের চোখ এসব ব্যাপারে বন্ধ।
আজিজার রহমান বাংলানিউজকে জানান, ব্রেক ফেল, সামনে চাকা পাংচার, স্টিয়ারিং মিস এসব কারণে রাস্তায় কোনো কিছু ঘটলে তাকে দুর্ঘটনা বলা হয়। কিন্তু আজকাল লাইসেন্স ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি ও চালকদের অসম প্রতিযোগিতার কারণে মানুষ মরছে। এসব ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে?
গাবতলী রোডের চেইন মাস্টার সামছুল হক খান বাংলানিউজকে জানান, মালিকদের নির্দেশ তাই বাস বন্ধ করে টার্মিনাল এলাকায় বসে আছি। যানবাহন ও জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে রাস্তায় গাড়ি বের করা সম্ভব না।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট এসব ব্যক্তিরা জানান, সবার মত তাদেরও জীবনের নিরাপত্তা প্রয়োজন। তারাও নিয়মের মধ্যে সবকিছু করতে চান। তবে এ জন্য সময় প্রয়োজন। চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু পাল্টে যাবে না। ছাত্রদের ভয়ে তারাও বাস চালাতে নিরাপত্তাবোধ করছেন না। এতে যাত্রী সাধারণের মতো তারাও কষ্টে আছেন। মালিকদের কোনো সমস্যা না হলেও তাদের দিন এনে দিন খেতে হয়। এ কারণে গাড়ি বন্ধ রাখা মানেই তাদের কষ্ট বেড়ে যাওয়া।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ঠনঠনিয়ার আন্তঃজেলা কোচ টার্মিনাল, তিনমাথা রেলগেট, বনানসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে বাসের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা যায়। আবার বাস না পেয়ে অনেককে বাড়ি ফিরে যেতেও দেখা যায়। আবার অনেকেই প্রয়োজনের তাগিদে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, রিকশা, ভ্যান ও হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন। ভেঙে ভেঙে এসব যানবাহননে করে মানুষকে কষ্ট করে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
হোসনে আরা বেগম, আব্দুল মজিদ, আব্দুল হান্নানসহ একাধিক যাত্রী বাংলানিউজকে জানান, সড়কে মানুষ মারবে আবার ওরাই বাস চলাচল বন্ধ রাখবে। অথচ এসবের প্রতিবাদ করা যাবে না। বাস চলাচল বন্ধকারী মালিক ও চালকদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বিষয়গুলো নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বগুড়া মোটরমালিক গ্রুপ শেরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, জীবনের নিরাপত্তার কারণে শ্রমিকরা নিজ থেকেই গাড়ি চালাচ্ছেন না। কেননা রাস্তায় কোনো নিরাপত্তা নেই। গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। আগুন দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রদের ভয়ে শ্রমিকদের হাতে চাবি দেওয়ার পরও তারা রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। এখানে কাউকে রক্ষার কোনো প্রশ্নই আসে না বলেও জানান এই মালিক নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৮
এমবিএইচ/এসএইচ