ওই দম্পতি ভিটেমাটি হারিয়ে এক মেয়েকে গ্রামে রেখে আরেক মেয়ে ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দু’মুঠো ভাতের আশায় ২০১৬ সালে পাড়ি জমায় রাজধানীতে। কিন্তু সেখানেও বিধি বাম, ঢাকায় কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের একটি ক্লাবে স্বামী পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ নিলেও স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণ ও চিকিৎসার খরচ জোগানোর সামর্থ্য ছিল না।
‘সম্প্রতি ছোট দু’পথশিশু ও অসুস্থ মায়ের মাথায় বোতল দিয়ে পানি ঢালছে, তাদের দেখাশুনার জন্য কেউ নেই’-- এই শিরোনামে ছবিসহ একটি পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তাদের ঢাকায় দেখতে যাওয়াসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন।
এরপর ঢাকার কলাবাগানে ওভারব্রিজের নিচে ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া ওই দম্পতিসহ দুই পথশিশু ও অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিয়ে কুড়িগ্রামে ফিরিয়ে এনে সাময়িকভাবে টিনসেডের পাকা বাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক।
শুক্রবার (১৩ জুলাই) দুপুরে পরিবারটিকে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে ফিরিয়ে এনে পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুলকুরবাজার এলাকায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে সাময়িকভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে একমাসের খাবারসহ নগদ অর্থ ও থাকার জন্য ঘর। পরে পরিবারটিকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর সুদীপ্ত কুমার সিংহ, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব নীলু, পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম উন্নয়ন ও গণকমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
পুনর্বাসিত ওই দম্পতি তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, নদী ভাঙনে ভিটা-মাটি হারিয়ে বাঁচার তাগিদে শিশু-সন্তানদের ভাত কাপড়ের জোগান দিতে ঢাকায় গেছিলাম। ওভারব্রিজের নিচে ঝুপড়িতে থেকেছি। আল্লাহর রহমতে আর ডিসি আপার সাহায্যে এহন নিজের জন্মস্থানে থাকার ব্যবস্থা হইলো। বাকি জীবনটা নিজের এলাকায় নিজের মতো কইরা স্বামী আর সন্তানদের নিয়া থাকতে চাই।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিন আল পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, ফরিদা বেগম ও তার পরিবারকে বর্তমানে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হলো। আমরা তাদের জন্য স্থায়ীভাবে বসবাসের জায়গা খুঁজছি। জায়গা পেলে তাদের বাড়ি করে দেওয়া হবে। তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনীর আওতায় সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে নয়, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে এই পরিবারটিকে পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই পরিবার যাতে স্বচ্ছলভাবে চলতে পারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ব্যবস্থা ও তার সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
এফইএস/এএটি