রোববার (১৭ জুন) বেলা ৩টায় লালবাগ পেরিয়ে কেল্লায় ঢুকতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইন। আর সেই ধরে শিশু কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-বৃদ্ধ দর্শনার্থীরা দলে দলে প্রবেশ করছেন।
তিনটি প্রবেশ পথের দুটি বন্ধ থাকায় উত্তর পশ্চিম দিকের গেট দিয়ে ঢুকতে হয়। ঢুকতেই গায়ে খোলা আকাশের মৃদুবাতাস বয়ে আসছে শুরু করলো। আষাঢ়ের তীক্ষ্ণ রোদ মনে হলো কিছুই গায়ে লাগছে না। গেটে থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে সবাই যাচ্ছে পরী বিবির সমাধি দেখতে। তার ঠিক দক্ষিণেই লালবাগ দুর্গ। আর পরী বিবির সমাধির ঠিক পূর্বদিকে রয়েছে দেওয়ান-ই-আম ও হাম্মাম খানা। পাশাপাশি পশ্চিম দিকে তৈরি করা হয়েছে একটি মসজিদ। এই গুলোকে আকর্ষণীয় করেছে মাটির প্লাটফরম, পুকুর, ঝর্ণা, জলাধারা এবং সুরঙ্গ পথ।
পাশাপাশি কেল্লার বাউন্ডারির দুই পাশে কাঁঠাল, অরজুনসহ নানান ফল ও ওষুধের গাছ, ইটের তৈরি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তার দুই পাশে এক ধরনের গেট গাছ দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে। সঙ্গেই কসমস, সূর্যমুখী, পাতাবাহারসহ নানা ফুলের গাছে ফুল ফুটেছে।
তারপাশেই ছোট ছোট সবুজ ঘাসের মাঠের মনোরাম দৃশ্য দর্শনার্থীদের টেনেছে কেল্লায়। ছোট-ছোট শিশুরা খালি মাঠ পেয়ে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে। আর এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে ছবি তুলছেন সবাই।
বরিশালের গৌরদীর বাসিন্দা আবুল কালাম সরকার ছোট বেলা মোগলদের কথা ইতিহাসে পড়েছেন। এখন মাঝ বয়সে স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে দেখাতে এসেছেন। তিনি বলেন, সেই সময় যুদ্ধে ব্যবহৃত তীর, ছুরি তরবারি বন্দুক দেখেছি। কেল্লা দেখেছি। সবকিছুই আমার কাছে ভালো গেলেছে।
তবে পানিবিহীন পুকুরে পানি থাকলে আরও বেশি ভালো লাগতো বলে যোগ করেন তিনি। যে খানে দর্শনার্থীরা এসে হাতমুখ ধুতে পারতেন। মাছকে খাবার দিতে পারতেন। মাছগুলো কাছে থেকে দেখতে পারতেন।
সার্কিব বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ কেল্লার দায়িত্বে থাকা কাস্টোডিয়ান হালিমা আফরোজ বাংলানিউজকে বলেন, লালবাগ দুর্গ একটি ঐতিহ্য। এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও সংরক্ষণ করা আমাদের কাজ। ৪-৫ বছরের এই ঐতিহ্য দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আছেন। দিনযতই যাচ্ছে ততই মানুষের মধ্যে লালবাগ দুর্গ দেখা ও তার ইতিহাস জানার জন্য আগ্রহ বাড়ছে।
গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদে মানুষের ভিড় ছিলো দ্বিগুণ বলেও জানান তিনি।
পরী বিবির মাজার
ঘাট গম্বুজ মসজিদের আকৃতিতে চার কোনে তৈরি সম্রাট শায়েস্তা খানের মেয়ে ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) সমাধিটির ভেতরের অংশ মার্বেল ও কষ্টি পাথরের পাশাপাশি বিভিন্ন রংয়ের ফুল-পাতার টালির সাহায্যে নয়টি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাঝের ঘরটি পরী বিবির সমাধি। বাকি আটটি কক্ষ সমাধিকে সুজজ্জিত করতে বানানো হয়। চারশ বছর আগের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটির বাহিরের অংশে কিছুটা নষ্ট হলেও ভেতরের অংশ এখনো ঝকঝক করছে।
বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা আকিব নামে এক কিশোর বাবাকে পরী বিবির সমাধি নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন শুরু করছে। কে এই পরী বিবি? তার নামে মাজার কেন? মাজারে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না কেন? কখনো বাবা আবার কখনো মা শিশুটির প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। মাজারটির কাছাকাছি যেই আসছেন প্রত্যেকেই অন্তত একটি ছবি তুলছেন।
লালবাগ দুর্গ
সমাধির ঠিক পশ্চিম দিকে রয়েছে সুসজ্জিত একটি মসজিদ। সমাধির ঠিক দক্ষিণ দিকে রয়েছে দুর্গ। এটির নাম ছিলো ‘আওরঙ্গবাদ’ দুর্গটির ওপরের অংশ এখন সবার জন্য উন্মোক্ত রয়েছে। তবে দুর্গের কক্ষগুলো বন্ধ রয়েছে। বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর পর দুর্গটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এরপর ১৮৪৪ সালে এটিকে লালবাগ দুর্গ নামকরণ করা হয়।
দরবার হল
বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে পরিচিত এ দরবার হল। এতে মোগল আমলের কোরআন শরিফ, অস্ত্রশস্ত্র, পান্ডুলিপি, মুদ্রা, মৃৎশিল্প, কার্পেট, চিত্র, হস্তলিপি ও রাজকীয় ফরমান রয়েছে। এই পুরাতন স্থাপনায় এসে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছে শিশু-কিশোররা। তারা রাজার ছবি, গোসল খানা, গরম পানির কক্ষ ইত্যাদি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের ইতিহাস জানছেন। প্রত্যাকেই ছবি তুলছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৮
এমএফআই/জিপি