বাড়ি নির্মাণে অপেক্ষাকৃত দরিদ্রপীড়িত মানুষের ভরসার নাম ছিল ‘ইকর’। খুব কম খরচে ঘর নির্মাণ করতে এ উদ্ভিদটির জুড়ি মেলা ভার।
সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল উপজেলার পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে গিয়ে ইকরের বাড়ির দেখা পাওয়া যায়। পুরো গ্রামে মাত্র একটি ইকর-বাড়ি।
হাওরপাড়ের বাসিন্দা রুকাম উদ্দিন বলেন, ইকর বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। আট-দশ বছর আগে যেভাবে পাওয়া যেত এখন আর সেভাবে পাওয়া যায় না। এই বাড়িটি প্রায় বারো বছর আগের বানানো। এখনো অনেক মজবুত। গরমের দিনে ইকর দিয়ে বানানো বাড়ির ভেতরটি ঠান্ডা থাকে। প্রচণ্ড গরমেও কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক ফ্যান ছাড়াই ওই ঘরে সারাদিন থাকা যায়। অস্বস্তি লাগে না একটুও।
‘কেউ কেউ আবার ইকরের বেড়ার উপর মাটির প্রলেপ দিয়ে দেন। এতে ইকরটি আরো সুরক্ষিত থাকে। উঁইপোকা, ইঁদুর সহজে এটি নষ্ট করতে পারে না বলে হাওর অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি এখনও বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে আমাদের হাওর অঞ্চলের অভাবী-গরিব মানুষদের কাছে এটির চাহিদা অনেক। বাজারে আঁটিপ্রতি ইকরের মূল্য একশ থেকে তিনশ টাকা। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ইকরের ইংরেজি নাম Giant Cane বা Giant Reed কিংবা Wild Cane। এর বৈজ্ঞানিক নাম Arundo Donax। এটি Poaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ‘টলগ্রাস’ বা উঁচু ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। এটি পরিবেশবান্ধব একটি গৃহনির্মাণ সামগ্রী।
‘এটি পাহাড়ের গাছ। তবে বর্তমানে এরা ‘ওয়েটল্যান্ড’ (জলাভূমি) এ ঢুকে পড়েছে। ইকর উদ্ভিদটি ৮-১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতাগুলো ধানের পাতার মতো সবুজ ও পাতার প্রান্তগুলো ধারালো।
বিশেষ করে বন-জঙ্গলের ছড়াগুলোর ধারে ইকর উদ্ভিদটি বেশি জন্মে। বর্তমানে বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ার ফলে উদ্ভিদটি আজ বিপন্নপ্রায় বলে জানান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
বিবিবি/এএ