ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মায়ের আকুতি, শিশু কন্যার জিজ্ঞাসা...

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
মায়ের আকুতি, শিশু কন্যার জিজ্ঞাসা... অপহৃত মহরমের মা রোকমা বেগম/ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: ‘আমি বাড়ি ঘর সব বেইচ্চা হেগরে (অপহরণকারী) টাকা দিমু। রাস্তায় থাকুম। সব ছাইড়া চইলা যামু। তারপরও আমার মানিক, আমার পোলারে তোমরা আইনা দ্যাও। আমার বুকটা তোমরা আর খালি কইরোনা।’

এই আকুতি অপহৃত মহরমের মা রোকমা বেগমের। গত ৫ দিন ধরে এভাবেই প্রশাসন, আত্মীয় স্বজনসহ ঘরে যে যাচ্ছে সন্তানকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছে।

গত শুক্রবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে বাসায় গেলে এই প্রতিবেদককে বিলাপ করতে করতে একই আকুতি জানান। এসময় অন্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
 
মাতম চলছে অপর দুই অপহৃত সালাউদ্দিন ও বাহারের বাসায়। সালাউদ্দিনের শিশু কন্যা যাকে দেখছে তাকেই জিজ্ঞেস করছে ‘আমার পাপ্পা কই’।
 
গত ১৬ এপ্রিল মহালছড়ির মাইছড়ি এলাকায় কাঠ কিনতে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হয় তিনযুবক। তারা হলেন- কাঠ ব্যবসায়ী মাটিরাঙ্গার নতুন পাড়া এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে সালাউদ্দিন (২৮), একই এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মহরম আলী (২৭) ও আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা ট্রাক চালক বাহার মিয়া। মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা।
 
জানা যায়, গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে কাঠ কেনার জন্য ওই তিন যুবক মাইসছড়িতে যায়। দুপুরে খাগড়াছড়িতে আনোয়ার নামে একজনকে মোবাইল ফোনে কাঠ ক্রয় বাবদ টাকা পাঠাতে বলে। টাকা পাঠানোর পর থেকে তিনজনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা। বন্ধ রয়েছে তাদের ব্যহৃত মোবাইল ফোন।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সোমাবার (১৬ এপ্রিল) আমার মোটরসাইকেল নিয়ে তিনজন মাইসছড়িতে গাছ কিনতে যায়। গাছ কেনার পর টাকা পাঠানোর জন্য আমাকে খাগড়াছড়ি রেখে যায়। বিকেল ৪টার দিকে আমার কাছে থাকা ৭৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। আমি ৫টি বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর পর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। কাঠ বোঝাই করার জন্য নিয়ে যাওয়া ট্রাকটি পরে লেমুছড়ি এলাকায় পাওয়া যায়।
 
খাগড়াছড়িতে অপহৃত তিনজন/ছবি: বাংলানিউজএদিকে এই ঘটনায় মাটিরাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রোববারের (২২ এপ্রিল) মধ্যে নিখোঁজরা উদ্ধার না হলে সোমবার হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
 
এদিকে গত ১৮ এপ্রিল অপহৃত সালাউদ্দিনের মোবাইল ফোন থেকে তার বাবা খোরশেদ আলমের কাছে অপহরণকারীরা ফোন দিয়ে ৩ জনের মাথাপিছু দেড় লাখ টাকা দাবি করে। টাকা পাঠালে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। ওই দিন রাতেই অপহরণকারীদের কাছে দেড় লাখ টাকা পাঠানো হয়। এরপর পুনরায় মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়।
 
খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি ছেলের (সালাউদ্দিন) সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। অপহরণকারী বলেছে টাকা পাওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। তখন নাকি সালাউদ্দিন নিজেই আমাকে ফোন দেবে। রাতে ১০টা বিকাশ নম্বরে দেড় লাখ টাকা পাঠানোর পর থেকে সালাউদ্দিনের মোবাইল ফোন আবার বন্ধ হয়ে গেছে।
 
এদিকে মহরম আলীর (২৭) মায়ের আহাজারী যেন থামছেই না। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে আব্দুল মালেক ২০০১ সালে দুবাই থেকে নিখোঁজ হন। আর হদিস পাওয়া যায়নি। মেঝ ছেলে রফিকুল ইসলাম পরিবারে ওপর অভিমান করে ২০০৮ সালে আত্মহত্যা করেন। সর্বশেষ ছোট ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তিনি হয়ে গেছেন পাগল প্রায়।
 
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্ভাব্য সবখানে খোঁজ নেয়া হয়েছে। প্রশাসন বারবার আশ্বস্থ করলেও তাদের তেমন তৎপরতা দেখছিনা। অপহৃতদের উদ্ধারে তিনি চিরুণী অভিযান চালানোর কথা বলেন।
 
এদিকে শুক্রবার (২০এপ্রিল) বিকেলে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে অপহরণের বিষয়ে বাঙালি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে অপহৃতদের ছাড়া না হলে ২৩ এপ্রিল সোমবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।  
 
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। ঘটনার বিস্তারিত জানতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। তবে এখন পর্যন্ত তিনযুবকের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলেও জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।