একটু পরেই সুর উঠলো মুর্তজা কবির মুরাদের বাঁশিতে। রাগ আহীরভায়রোতে তিনি বাংলার মাটিতে টেনে নামিয়ে নিলেন নতুন দিনের ভোরের রক্তিম সূর্যটা।
শনিবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের সকাল সোয়া ৬টায় ছায়নটের আয়োজনে শুরু হয় বর্ষবরণের প্রভাতী আয়োজন। হলুদ সবুজ পোশাকে এ সময় রমনার বটমূলে প্রায় দেড় শতাধিক শিল্পী তাদের সুর-ছন্দ আর তাল-লয়ে বৈশাখের বন্দনা করে স্বাগত জানান নতুন বছর ১৪২৫কে। তাদের সে আয়োজনে ছিলো বৈশাখের মগ্নতা, হৃদয়ে নতুনকে কাছে পাবার তৃষ্ণা আহবান।
বটমূল প্রাঙ্গণে কথা হয় উত্তরা থেকে আসা নাহিদা আফরোজের সঙ্গে। সকাল সাতটার মধ্যেই তিনি উত্তরা থেকে সপরিবারে এসে হাজির হয়েছেন রমনায়। উদ্দেশ্য একসঙ্গে বর্ষবরণ।
বাংলানিউজকে নাহিদা বলেন, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বৈশাখের প্রথম প্রহরে বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন হিসেবে ছায়ানটের এ আয়োজন পরিচিত। আর বৈশাখ বন্দনার মধ্য দিয়ে বৈশাখকে বরণ করার থেকে ভালো আর কি হতে পারে! তাইতো সকাল সকাল বের হয়ে এসেছি বাসা থেকে। এরপর মঙ্গল শোভাযাত্রা, আর তারপর সারাদিন ঘোরাঘুরি।
সকালে রমনা ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই এসেছেন সপরিবারে। কেউ এসেছেন নিজের একান্ত প্রিয় মানুষটির সঙ্গে। লাল-সাদা আর হলুদ-নীলে নতুনত্বের উচ্ছলতা ছিলো তাদের সকলের মাঝেই। রমনার সবুজ ঘাসে এসময় অনেকেই মাদুর বিছিয়ে দিয়েছেন আড্ডাও। এসেছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকও।
সকালের আয়োজনে দাদরা, ত্রিতাল, ঝাঁপ, আড়ঠেকা, কাহারবা, ও তেওড়া'সহ বিভিন্ন তালে শিল্পীরা সম্মেলক গানসহ একক সঙ্গীত নিবেদন করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পূর্ব গগন ভাসে দীপ্ত হইলো সুপ্রভাত, ওই পোহাইলো তিমির রাতি, শুভ্র প্রভাতে তিমির গগনে, প্রথম আলোর চরণধ্বনি, জাগো অরুণ ভৈরব, শ্রভ্র সমুজ্জল হে চির নির্মল, প্রাণের প্রাণ জাগিছে তোমারি প্রাণে, তোমার হাতের রাখীখানি, প্রভাত বীণা তব বাজে, আজি গাও মহাগীত, গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা, কাবেরী যমুনা ঐ, আজি নতুন রতনে, জল বলে চল, প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে, মালা হাতে খসে পড়া, তোমার দ্বারে কেন আসি ইত্যাদি।
একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন অভয়া দত্ত, সুমা রাণী রায়, খাইরুল আনাম শাকিল, সত্যম কুমার দেবনাথ, সেজুতি বড়ুয়া, সুস্মিতা দেবনাথ সূচি, মাহমুদুল হাসান, লাইসা আহমেদ লীসা, সেমন্তী মঞ্জুরি, এটিএম জাহাঙ্গীর প্রমূখ। ‘পৃথিবী জোড়া গান’ আবৃত্তি করেন শামীমা নাজনীন।
আয়োজন সম্পর্কে ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন বলেন, পাকিস্তানি আমলের বৈরী পরিবেশে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্র করে ছায়ানটের যে যাত্রার সূচনা হয়, তা মূলত বাঙালির আপন সত্তাকে জাগিয়ে তুলবার জন্য; আপন সংস্কৃতিকে বাঁচাবার অধিকার ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ/