ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ কার্তিক ১৪৩২, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

হরিজন পল্লিতেও নতুন বইয়ের গন্ধসুধা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৪৫, জানুয়ারি ১, ২০১৮
হরিজন পল্লিতেও নতুন বইয়ের গন্ধসুধা নতুন বই হাতে হরিজন পল্লির শিশুরা

যশোর: হাতে নতুন বই নিয়ে মায়ের হাত ধরে যশোর হরিজন পল্লিতে ঢুকলো শিশু অর্পনা বিশ্বাস, সঙ্গে সহপাঠী শ্যামলী। তারা স্থানীয় মসজিদ মহল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। শহর-গ্রামের কোটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে আনন্দ ছুঁয়েছে তাদের ঘরেও। অনেকটা ‘অচ্ছুত’ সমাজে থেকে সভ্য সমাজের দীক্ষা-আচার ভুলতে বসা এ সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোররাও এখন দেখছে নতুন স্বপ্ন। তাদের পরিবারও তাই। বাবা-মায়ের পেশা নয়, নতুন বইয়ের গন্ধ মেখে তারাও এখন অপর্না কিংবা শ্যামলীর মতো স্বপ্ন দেখে।

অর্পনা যশোর শহরের চিত্রা মোড়ের পার্শ্ববর্তী পুরাতন পৌরসভা হরিজন (ডোম) পল্লির বাসিন্দা স্বপন বিশ্বাসের মেয়ে। বছরের শুরুতেই নতুন বই হাতে পাওয়ার দিন হরিজন পল্লিতে গিয়ে কথা হয় শিশু অর্পনার মা সাবিত্রী বিশ্বাসের সঙ্গে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মানুষের চোখে আমরা নিচু (নিম্নবর্ণের) হলেও মাইয়ে (মেয়ে) শিক্ষিত বানাতে চাই।  বছরের প্রথম দিনে অর্পনাকে নিয়ে স্কুলে বই আনতে গিছিলাম। সে (অর্পনা) বই হাতে পেয়ে আনন্দ করেছে, স্কুলের অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে বই খুলে পড়েছে।
  
তাদের সঙ্গে থাকা একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ও হরিজন পল্লির বাসিন্দা সার্জন সুজনের মেয়ে শ্যামলী বাংলানিউজকে বলে, বাড়ি যেয়ে নতুন বই পড়বো, কাল থেকে স্কুলে যাবো আর বাবাকে আজ খাতা কিনে আনতে বলবো।  

লালদীঘির পূর্বপাড়ের মসজিদ মহল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হরিজন পল্লির আরও অনেক শিশু নতুন বই পেয়ে আনন্দে মেতেছে।  

স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপংকর দাস রতন বাংলানিউজকে বলেন, এই স্কুলের ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাড়ি হরিজন পল্লিতে। তারা শিক্ষার ব্যাপারে আগের তুলনায় অনেক সচেতন হয়েছে। এছাড়াও সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণের পাশাপাশি শতভাগ উপবৃত্তি দেওয়ায় আমরা তাদের স্কুলমুখী করতে পেরেছি।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যশোর পুরাতন পৌরসভা হরিজন পল্লিতে প্রায় দুইশ পরিবারের বসবাস। এ পল্লির বাসিন্দা অধিকাংশ নারী-পুরুষ পরিচ্ছন্নতাকর্মী। অনেকে আবার হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী কিংবা লাশকাটা ঘরে কাজ করেন। ফলে এদের অনেকে পূর্বপুরুষদের রীতি অনুযায়ী কম-বেশি নেশায় জড়িত হতে দেখা যায়।  

সবমিলিয়ে সাধারণ সমাজের তুলনায় এ পল্লীতে কোনো রকম শিক্ষার পরিবেশ নেই বললেই চলে। তবুও এখানকার অর্ধশত ছেলে-মেয়ে নতুন বই হাতে নিয়ে আনন্দে ঘরে ফিরেছে। স্থানীয়দের মতে এরা প্রবাদবাক্য ‘গোবরে পদ্মফুলে’র মতোই। নিজেদের আগ্রহে পড়াশোনা করে শিক্ষিত হয়ে হয়তো অনেক বড় হবে বলে প্রত্যাশা সবার।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
ইউজি/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।