ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু নিয়ে ভুলেভরা বইয়ের ভোল পাল্টে চালাকি বিকুলের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৭
বঙ্গবন্ধু নিয়ে ভুলেভরা বইয়ের ভোল পাল্টে চালাকি বিকুলের ‘আপন আলোয় বিশ্বভুবন’ দুই সংস্করণের দুটি বই, ছবি : বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে সম্পাদিত বই নিয়ে একের পর এক চালাকি করে চলেছেন ধুরন্ধর সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তী। ভুলে ভরা বইটির চতুর্থ সংস্করণে পরিবর্তন হয়ে গেছে প্রকাশকের নাম। প্রকাশ হিসেবে নতুন যার নাম ব্যবহার করেছেন তিনি আবার জানেনই না। বাদ দেওয়া হয়েছে ইউএনওসহ দু’জনের বাণী (আগে তাদের অনুমতি না নিয়েই ছাপা হয়েছিল)। যুক্ত হয়েছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির ছবি-নাম। পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে প্রচ্ছদও। যার মূলে রয়েছে বিকুলের আরও বেশি অর্থলোভ।

বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী ‘আপন আলোয় বিশ্বভুবন’ শীর্ষক বইটিতে অসংখ্য বানান ভুল, বাক্য গঠনে অসঙ্গতি ও ভুল নাম প্রকাশ করে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করা হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুর নামে এটা এখন হয়ে গেছে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের বই।

***বিকুলের ভুলে ভরা বই জব্দ করেছে প্রশাসন  

অক্টোবর ২০১৭ সালে প্রকাশিত বইটিতে যার নাম প্রকাশক হিসেবে লেখা রয়েছে তার বক্তব্য প্রকাশে সম্মতিও নেননি সম্পাদক বিকুল। বইয়ের তথ্যও সব অন্য একটি ওয়েবসাইট থেকে চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন তিনি। তথ্যসূত্র নিয়ে কোনো কৃতজ্ঞতা বইয়ের কোথাও প্রকাশ করেননি বিকুল। উপরন্তু ভুলে এই বই ঘটা করে প্রকাশনা উৎসব শেষে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।  

বইটির সবশেষ সংস্করণে যুক্ত করা হয়েছে মোহাজিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের আলোকচিত্রসহ নাম।  

এরা হলেন- সেলিম আহমেদ, সভাপতি; মো. চেরাগ মিয়া, দাতা সদস্য; কামরুল হাসান, সদস্য সচিব/প্রধান শিক্ষক; মো. আমিনুল ইসলাম, অভিভাবক সদস্য; মো. দেলোয়ার হোসেন, অভিভাবক সদস্য; মো. ইউনুছ খাঁ, অভিভাবক সদস্য; মহসিন আহমেদ, অভিভাবক সদস্য; মো. আব্দুল বারী, শিক্ষানুরাগী সদস্য; রিনা বেগম, সংরক্ষিত মহিলা অভিভাবক সদস্য; মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষক প্রতিনিধি; কামাল হোসেন, শিক্ষক প্রতিনিধি; এবং মোছা. হালিমা বেগম, সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি।  

জাতির জনকের বইয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির ছবি! ‘আপন আলোয় বিশ্ব ভুবন’ বইটির চতুর্থ সংস্করণ যিনি প্রকাশ করেছেন সেই প্রকাশকের নেওয়া হয়নি মতামত বা সম্মতি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চ্যানেল ৯ ও দৈনিক সবুজ সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি ইমন দেব চৌধুরী বলেন, আমাকে না জানিয়ে আমার ছবিসহ নাম ওই বইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।  

এই বইসহ মোট চারটি সংস্করণই মুদ্রণ করেছে শ্রীমঙ্গলের ‘মুদ্রণবিদ কম্পিউটার অ্যান্ড অফসেট প্রিন্টার্স’। প্রতিটি বই প্রকাশনার আগে বইটি সম্পাদনাকারীকে কোনো প্রুফ দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে এ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে স্বত্ত্বাধিকারী অবিনাশ আচার্য বাংলানিউজকে বলেন, নিশ্চয়। আমাদের প্রিন্টিং শর্তে রয়েছে গ্রাহক নিজ দায়িত্বে প্রুফ দেখে দেবেন। আমরা এভাবেই কাজ করে আসছি।

***‘আপন আলোয় বিশ্ব ভুবন’ বিকুলের চৌর্যবৃত্তি!

জানা যায়, মোহাজিরাবাদ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিকুল চক্রবর্তী তার ‘আপন আলোয় বিশ্বভুবন’ প্রকাশের কথা বলে কিছু অর্থপ্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ে তাদের প্রত্যেকে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে আবার বইটি প্রকাশের জন্য বিকুল চক্রবর্তী আরেকজন প্রকাশকের নামও জুড়ে দিয়েছেন।  

জাতির জনকের বইয়ে বিদ্যালয়ের ছবি! ৩য় সংস্করণে বইটির পেছনের পাতায় বিকুল চক্রবর্তীর আলোকচিত্র সম্বলিত লেখাটির নিচে প্রকাশকের নাম লেখা রয়েছে মৌলভীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা অঞ্জনা ঘোষ।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিকুলের ভুলে ভরা বই শিক্ষার্থীদের হাতে

আর ওই একই বইয়ের ৪র্থ সংস্করণের ১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশকের আলোকচিত্র সম্বলিত লেখাটিতে প্রকাশকের নাম লেখা রয়েছে চ্যানেল ৯ ও দৈনিক সবুজ সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি ইমন দেব চৌধুরী। আলোচনা-সমালোচনায় ভোল পাল্টে রাতারাতি প্রকাশকের নাম পরিবর্তনেও পিছপা হননি বিকুল।   

৩য় সংস্করণের সঙ্গে ৪র্থ সংস্করণে প্রচ্ছদেরও রয়েছে অমিল। ৩য় সংস্করণে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভরাট বক্তিত্বের মৃদুসাহ্যময় মুখশ্রী। আর ৪র্থ সংস্করণে রয়েছে গম্ভীর দৃষ্টি নিয়ে একটি চেয়ারে বসে আছেন বঙ্গবন্ধু।  

১৬ পৃষ্ঠার বইটির মাঝে ২, ১৪ এবং ১৬ নম্বর পৃষ্ঠা মোহাজিরাবাদ স্কুল কর্তৃপক্ষের দখলে! ২য় পৃষ্ঠায় ম্যানেজিং কমিটির ১২ জনের ছবি, ১৪নম্বর পৃষ্ঠায় মোহাজিরাবাদ স্কুলের গুণকীর্তন এবং শেষের পাতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলোকচিত্র।  

অবশিষ্ট ৯ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ‘চুম্বক অংশ’। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ে এভাবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ছবি, নাম ব্যবহার কারও অবমাননাকর। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সম্পাদক বিকুল নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে এটা করেছেন বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত বইটির ৪র্থ সংস্করণে মোহাজিরাবাদ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ১২টি ছবি সংযুক্ত করা শোভনীয় হলো কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সেলিম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এটি বিকুল চক্রবর্তী করেছেন। প্রতিশ্রুতি ছিল বইটি বের করার পর কিছু টাকা আমরা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাকে দেবো।  

এদিকে বিকুল চক্রবর্তীর তৃতীয় সংস্করণে প্রকাশিত বইটিতে নিজের নামে ভুল খুঁজে পান শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি আজই এ বইয়ে আমার নিজের ভুল নামটি দেখলাম।

অনুমতি না নিয়ে নিজের ছবি ও বাণী প্রকাশ করার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীমঙ্গলের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, জাতির জনক শ্রদ্ধার একজন মানুষ। ভুল বানানে বা ইতিহাস বিকৃত করে যেমন বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে, তেমনি তার বইয়ে অন্য ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করাও একটি গর্হিত অপরাধ।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।