ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মিয়ানমার আর্মির নির্মমতা এড়াতে উত্তাল নাফ নদী পাড়ি

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
মিয়ানমার আর্মির নির্মমতা এড়াতে উত্তাল নাফ নদী পাড়ি মিয়ানমার আর্মির নির্যাতন সওয়ার চেয়ে নাফ নদীতে ডুবে মরাকেই বেছে নিয়েছিল ওরা; ছবি:সোহেল সরওয়ার

ঢাকা: 'মিয়ানমার আর্মির অত্যাচারের শিকার হওয়ার চেয়ে নাফ নদীতে ডুবে মরা ভালো। ওরা খুব ভয়ানক মানুষ। ওদের অত্যাচার সহ্য করা যায় না। যুবতী মেয়েদের ধরে ধরে ধর্ষণ করে। এরপর গুলি করে, ছুরি দিয়ে জবাই করে মেরে ফেলে। বাচ্চাদের আছাড় দিয়ে মারে। ওরা হিংস্র পশুর চেয়েও খারাপ।'

কথাগুলো বলছিলেন নাফ নদী পেরিয়ে সদ্য বাংলাদেশে পা-রাখা রহিমা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হিংস্রতার বর্ণনা দেবার সময় তার চোখে মুখে ছিলো তীব্র ঘৃণা আর বিদ্বেষ।

স্বামীহারা এই নারী দুই সন্তান নিয়ে মিয়ানমারের মন্ডু জেলার নাফাফপাড়া থেকে উত্তাল নাফ পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

কক্সবাজার জেলায় সামুদ্রিক নিম্নচাপের কারণে চলছে সর্তকতা সংকেত। নিম্নচাপের প্রভাবে রাত থেকে একটানা অঝোর বৃষ্টি ঝরেই চলেছে একটানা। কক্সবাজারের সাগর ও নদীগুলো উত্তাল আকার ধারণ করেছে।

মিয়ানমার আর্মির নির্যাতন সওয়ার চেয়ে নাফ নদীতে ডুবে মরাকেই বেছে নিয়েছিল ওরা; ছবি:সোহেল সরওয়ারমিয়ানমারের খুনে সেনাবাহিনীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বৈরী আবহাওয়ায় উপেক্ষা করে উত্তাল বঙ্গোপসাগরের মোহনা নাফ নদী পেরিয়ে দলে দলে  আসছে রোহিঙ্গারা। তাদের কথাবার্তায় বোঝা গেল, নদীতে ডুবে মরলেও তারা আর্মির হাতে মরতে রাজি নয়।

কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়নের মাজেরপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট সংলগ্ন নাফ নদী দিয়ে মঙ্গলবারও (১৯ সেপ্টেম্বর) নৌকা বোঝাই রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে স্রোতের মতো। এর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধই বেশি। নারীদের কারো কারো স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে, কোনো কোনো নারী ধর্ষিত হয়েছেন, কারো কারো জোয়ান ছেলেকে চোখের সামনে মেরে ফেলেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

শাহপরীর দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঝড়ো বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নদীর উত্তাল ঢেউয় পেরিয়ে রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। এতে বোঝা যায়, খুন-নির্যাতন কতোটা ভয়ঙ্কর হলে এমন ঝুঁকি নেয় মানুষ।

জবাই করা স্বামীর মৃতদেহ ফেলে রেখে চার সন্তানকে নিয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়েছেন ফাতেমা। মন্ডু জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম শিলখালি থেকে গতকাল রাতে রওনা দিয়ে সকালে নামেন ফাতেমা।

ফাতেমার সঙ্গে আসা শাশুড়ি হাফেজা বলছিলেন, কোরবানি ঈদের ৫দিন পরে তার ছেলেকে জবাই করে মারে। সুযোগের অভাবে এতদিন আসতে পারেননি। গতকাল রাতে নৌকায় করে রওনা দেন। ঝড়-বৃষ্টির কারণে নদী পার হতে অনেক ভয় লাগছিল। মাঝরাতে শুনলেন কাদের যেন নৌকা ডুবেছে। নাতি নাতনী নিয়ে আল্লাহ, আল্লাহ করতে করতে এসেছেন।

মাঝেরপাড়া পয়েন্টের রাস্তা নাফ নদীর স্রোতে ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায়। ভাঙা রাস্তা দিয়ে দলে দলে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। নৌকা থেকে নামা রোহিঙ্গা শিশুদের স্রোতের কারণে ভেসে যাচ্ছিল। পরে স্থানীয় লোকজন শিশুদের উদ্ধার করে।

অন্যদিকে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাস্তার ধারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পযর্ন্ত বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা ঢুকেছে। প্রতিনিয়ত ঢুকছে বলে পরিসংখ্যানও বদলাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, সব মিলে বাংলাদেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে।

বাংলাদেশ সময়:১৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।