ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘পুরুষদের করা হয়েছে জবাই, নারীদের ধর্ষণ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
‘পুরুষদের করা হয়েছে জবাই, নারীদের ধর্ষণ’ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ছবি: সোহেল সারওয়ার

ফাড়িরবিল, উখিয়া থেকে: মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু’র কোয়াংশি গং গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষকেই জবাই করা হয়েছে আর নারীরা হয়েছেন ধর্ষণের শিকার। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের দিনে একবার পাউরুটি খেয়ে কাটাতে হচ্ছে।

এমনটাই জানিয়েছেন উখিয়ার পালংখালির ফাড়িরবিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।

চোখ-মুখ আঁচলে ঢেকে রোহিঙ্গা নারী আছিয়া বলেন, ‘রাতে স্বামীর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া শেষ করেছি মাত্র।

আর্মি আসছে বলে সবাই চিৎকার করছিলেন। আমরা পালাবো বলে ঘরে রাখা টাকা আর স্বর্ণ নিয়ে বের হলাম। ততোক্ষণে উঠানে কালো মুখোশপরা অন্তত ১০ জন হাজির। আমার স্বামীকে গাছে বেধে ফেলা হলো। তার সামনেই আমাকে ধর্ষণ করেছে দু’জন কালো মুখোশপরা লোক’।

‘ভোরে যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখলাম- আমি মাটিতে পড়া। আর সারা উঠানে রক্ত। স্বামীকে আর দেখতে পাইনি। জীবনটা নিয়ে প্রতিবেশিদের সঙ্গে পালিয়ে এলাম খালি হাতে’।

আছিয়া বলেন, ‘গত ১০ দিনে ভাত খাইনি। অন্যরা যখন পাউরুটি খান, তখন আমাকেও দেন। জানি না, বেঁচে থাকতে পারবো কি-না। তবে এ জীবনের চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো’।

আশ্রয় নিয়ে আছেন রোহিঙ্গারা, এর মাঝেই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পাঠদানও।  ছবি: সোহেল সারওয়ার বিদ্যালয়টির বারান্দায় বসেছিলেন ফাতেমা বেগম। আছিয়ার মতোই কোয়াংশি গং গ্রামের বাসিন্দা তিনিও। ছোটবেলা, বিয়ে, সন্তানদের লালন-পালন সবই কেটেছে ওই গ্রামে।

কোয়াংশি গং গ্রামের যে ৫০টি পরিবারের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার একটি ছিলো ফাতেমাদের। তার স্বামী মাহমুদকেও হত্যা করে মিয়ানমারের কালো মুখোশধারীরা।

ফাতেমা বেগম জানান, ১০ কানি জমির (৪ একর)  মালিক ছিলেন তার স্বামী মাহমুদ। বড় তিনটি ঘরের সঙ্গে ছিলো গোলা ভরা ধানও। তিন মেয়ে এক ছেলেকে ‍নিয়ে ছিলো সুখের সংসার। মেয়ে তিনজনের বিয়ে হয়েছিলো, ছেলে জামালেরও বিয়ে দিয়েছিলেন ধুমধাম করে।

এখন পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই বলেও জানান ফাতেমা বেগম।

বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেন ফাতেমা বেগম। রাতভর চলে গ্রামের পুরুষদের জবাই করার মতো নৃশংস ঘটনা। বাঁশঝাড় থেকে সবই দেখেছেন ফাতেমা বেগম ও তার প্রতিবেশি পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী রম্বার।

তিনি বলেন, ‘শেষ রাতে চলে যায় কালো মুখোশধারীরা। বাড়িগুলোর উঠানেই থেকে গলাকাটা পুরুষদের মরদেহ মাটিচাপা দেওয়া হয়’।

ভোরে বাঁশঝাড় থেকে বের হয়ে আসেন ফাতেমা বেগম ও প্রতিবেশিরা। আশেপাশের পুকুর ও খালে যারা লুকিয়ে ছিলেন, তারাও বের হয়ে আসেন।

চারদিন হেঁটে জঙ্গল পার হয়ে পালংখালি আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন কোয়াংশি গং গ্রামের ওই ৫০টি পরিবারের নারী সদস্য ও বেঁচে যাওয়া হাতেগোনা কিছু পুরুষ।

এ চারদিনই না খেয়ে একটানা হেঁটেছেন তারা।

সীমান্ত পার হয়ে ফাড়িরবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর)  বিকালে আশ্রয় নেন ফাতেমা ও রম্বারসহ প্রায় ২০০ জন নারী।

অনেক রোহিঙ্গা নারীই মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত।  ছবি: সোহেল সারওয়ারএরপরের চারদিন ধরে একবেলা পাউরুটি খেয়ে দিন কাটছে ফাতেমাদের। আর বেঁচে আসা পুরুষ সদস্যরা বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ধর্ষণের শিকার অনেক নারীই মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত বলেও জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
ইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।