২৪ ঘণ্টা এই সহায় সম্বলহীন মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। দুই একদিনের মধ্যে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
গত এক সপ্তাহ ধরে চারটি নামকেই তাদের এই দুর্দশার কারন হিসেবে উচ্চারণ করছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। এই অভিযুক্ত কালপিটরা হলেন- সামরিক জান্তা জেনারেল মিন আং লাইং, অং সান সুচি, অশ্বীন উইরথু ও মাওলানা আতাউল্লাহ।
এই চার নাম এখন রোহিঙ্গাদের আতংক, ঘৃণা ও ক্ষোভের নাম। এই চার চরিত্র এখন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও সমালোচিত।
খুনি মানসিকতার মুসলমান বিদ্বেষী জেনারেল মিন আং লাই মুসলিম নিধনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছেন। তার নেতৃত্বেই আরাকানে সেনাবাহীনি রোহিঙ্গা নিধনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বহুদিন ধরে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, তাদের ওপর আক্রোশ ও ঘৃণার বিষযটি বুঝতে হলে অশ্বীন উইরাথুকে জানতে হবে। বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে অং সান সু চি'র সঙ্গে অশ্বীন উইরাথুকেও ধিক্কার জানানো হচ্ছে। তার বহুল আলোচিত ‘৯৬৯ মুভমেন্ট’ সেদেশ থেকে মুসলিমদের তাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয়। ২০০১ সালে এই সংগঠনটির প্রাথমিক ধারণা বা চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ পেলেও এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর বৌদ্ধদের অন্যতম উৎসব থাডিং উট এর পূর্ণিমার রাতে।
এর নেতৃত্বে রয়েছেন মিয়ানমারের এই উগ্রবাদী বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা অশ্বীন উইরাথু। ‘৯৬৯ মুভমেন্ট' প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে সংগঠিত করে মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সেনাবাহীনির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালানো বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বীরা তারই সমর্থক। তিনিই প্রথমে আরাকানে বৌদ্ধদের পুর্বাসনের দাবি জানান।
ইতোমধ্যে অশ্বীন উইরাথুর মুসলিম বিদ্বেষী অনেক বক্তব্য গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে। তার একটি হচ্ছে- ‘ইউ ক্যান বি ফুল অব কাইন্ডনেস অ্যান্ড লাভ, বাট ইউ ক্যাননট স্লিপ নেক্সট এ ম্যাড ডগ। ’ বহুল প্রচারিত আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন টাইমসের ২০১৩ সালের জুন সংখ্যায় অশ্বীন উইরাথুকে নিয়ে ‘ফেইস অব বুড্ডিস্ট টেরর’ শিরোনামে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে তাকে ‘বুড্ডিস্ট বিনলাদেন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইন্ডিপেন্ডন্ট তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ করে ব্রুটাল বুড্ডিস্ট শিরোনামে।
তিব্বতের আধ্যাত্মিক ধর্মীয় নেতা দালাই লামা তার সমালোচনা করে বলেছেন- মহামতি গৌতম বুদ্ধের পথ অনুসরণ করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ করুন।
চতুর্দশ দালাই লামা বলেন, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সানসুচিকে জানাতে চাই, যারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে 'হয়রানি' করছে, তাদের এসব আগ্রাসী কর্মকাণ্ড করার আগে মহামতি বুদ্ধের কথা একবার মনে করা উচিত। বুদ্ধের অহিংস পথ অনুসরণ করে সহিংস কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণকারীদের আহ্বান জানান তিনি। এর আগে তিনি বলেছিলেন, আমি অনুভব করি, এমন জায়গায় থাকলে গৌতম বুদ্ধ ওই অসহায় মুসলমানদের সাহায্য করতেন।
সম্প্রতি নিউয়র্ক টাইস রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালানো, ঘরবাড়ি পোড়ানো এবং সুচির মিথ্যাচার আর সমর্থনকে ‘দ্যা শেইম লেস লেডি’ নামে শিরোনাম করেছে। এতে তারা সুচির দেওয়া নোবেল বক্তৃতাকেই সুচিকে মনে করিয়ে দিয়েছে। যে বক্তৃতায় সুচি বলেছিলেন, আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে এমন এক পৃথিবী বিনির্মাণ, যে পৃথিবীতে থাকবে না গৃহহীন কোনো উদ্বাস্তু এবং আশাহীন কোনো মানুষ। সে এমন এক পৃথিবী যার প্রতিটি প্রান্ত হবে মানুষের সত্যিকারের আশ্রয়স্থল এবং যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে। '
এরই মধ্যে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের বহুল আলোচিত নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস বলেছেন, তিনি (অং সান সু চি) মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। সেজন্য তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। তাকে শান্তির দূত হিসেবে আগের ভূমিকায় ফিরে যেতে হবে। আমার ধারণা, তার মধ্যে শান্তির বিষয়টি এখনো আছে, কিন্তু তিনি ঘৃণার পরিবেশ দ্বারা জড়িয়ে আছেন।
তার ভাষায়, সুচি বর্তমানে ঘৃণার পরিবেশ দ্বারা আবদ্ধ হয়ে আছেন। এই সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি যেহেতু একমাত্র তারই হাতে তাই, তাকেএই পরিবেশ থেকে বের হয়ে এসে সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে হবে।
তবে তিনি এও মনে করেন, হয়তো অং সান সুচিকে সামনে রেখে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে অভিযান চালাচ্ছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অবশ্য তাদের এই দুর্দশার জন্য আরসা বা আরাকান স্যালভেশন আর্মির প্রধান মওলানা আতাউল্লাহকে ও দায়ী করেছেন। তাদের ধারনা, সেনাবাহিনী ও সরকারের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে আরসা নামে এক অজুহাত দাড় করেছেন এই আরসা নেতা।
রোহিঙ্গা শরনার্থী টম বাজারের ফাইজুল্লাহ যেমন জানতে চাইলেন, আতাউল্লাহ কি মুসলমান? তাহলে সে এই ভোগান্তি তৈরি করলো কেনো? একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছেন আরসা বা আলেকিনের ও অত্যাচারের গল্প আছে আরাকানে। যেমন ইদ্রিস বলছিলেন, আমাদের হয়েছে শাখেঁর করাতের অবস্থা। আমরা দিনে মগ ও সেনাবাহীনির ভয়ে থেকেছি আর রাতে আলেকিন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসে যতোবার আলেকিন বা আরসার নাম শুনলাম ওপারে তা শুনিনি। তাদের চেহারাও কেউ দেখেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭
আরএম/বিএস