ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সব হারানোর কষ্ট

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
সব হারানোর কষ্ট শুয়ে আছেন আহত করিমা খাতুন, ছবি: দীপু মালাকার

টেকনাফ (কক্সবাজার): মঙ্গলবার রাত নয়টা। টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্ট্রেচারে শুয়ে আছেন করিমা খাতুন। সঙ্গে তার বাবা মাহমুদুল হক ও ডায়রিয়া আক্রান্ত ভাই আব্দুল আমিন। সাবরাংয়ের হাড়িয়াখালি স্কুলে রয়েছেন তাদের পরিবারের আরও আট সদস্য। সেখানকার স্থানীয়রাই তিনজনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছেন।

করিমা খাতুন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরই একজন প্রতিনিধি। গত সাতদিন আগেই যিনি তার স্বামী নূর মোহাম্মদ ও আড়াই বছরের ছেলে মোহাম্মদ আনাসকে হারিয়েছেন।

আর এখন হারাতে বসেছেন নিজের বাম হাত! দ্রুতই হাত থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি বের করতে না পারলে সংক্রমণে আক্রান্ত হাতটি হয়ত কেটেই ফেলতে হবে। সেই শঙ্কা নিয়ে তিনি এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

করিমা বলছিলেন, তাদের বাড়ি রাখাইন রাজ্যের রচিডংয়ের রাজারবিল এলাকায়। গত ৫ সেপ্টেম্বর যখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে আক্রমণ করে তখন তিনি ও তার স্বামী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিলেন। এমন সময় একটি গুলি এসে লাগে মায়ের কোলে থাকা আনাসের গায়ে। গুলিতে একমাত্র সন্তান আনাসের নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা যায় করিমা খাতুনের স্বামী নুর মোহাম্মদও। তার হাতেও গুলি লাগে। সেনার গুলিতে মৃত সন্তানকে নিয়ে মা ছুটতে থাকেন সামনের দিকে। পেছনে পড়ে থাকে স্বামীর মরদেহ। পরিবারের সবাই মিলে সন্তানকে দাফন করলেও তিনদিন পর স্বামীর মরদেহ খুঁজে পেলেও তা এনে দাফন করতে পারেননি তারা। সেনা সদস্যরা এতে বাধা দেয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ছবি: দীপু মালাকার

মেডিকেল স্ট্রেচারে শোয়া করিমা বলছিলেন, গুলি লাগার পরও টাকার অভাবে তারা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসতে পারেননি। মঙ্গলবার নিজে ও তার মা আট আনা স্বর্ণের দুল দিয়ে ১১ সদস্যের পরিবারটিকে পার করেছেন। আজই তারা শাহপরীর দ্বীপে নেমেছেন।

করিমা খাতুনের ভাই আব্দুল বাংলানিউজকে জানান, ৫ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী তিন হাজার পরিবারের গ্রামের ৬০০ বাসিন্দাকে মেরে ফেলে। আহত হন ৫২ জন। নিহতদের মধ্যে মাত্র ১১ জনকে দাফন করার সুযোগ পেয়েছে স্বজনরা।  এই আহতদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দেন পাড়ার এলএমএফ ডাক্তার। বর্তমানে হাতে লাগা গুলির সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট হারাধন দে বলছিলেন, করিমার হাতে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। গুলি লাগার অনেক দিন হয়ে যাচ্ছে, বেঁধে রেখে এর চিকিৎসা চলে না। হয়ত তার হাতটাই কেটে ফেলতে হতে পারে।

এছাড়া এই হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা না থাকায় সুস্থ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।  পাশাপাশি সংক্রামণ রোধে ইনজেকশন নেবেন এই টাকাও নেই সাথে, ফলে সব হারানো করিমা খাতুনের শেষমেশ হাতটাও হারাতে হয় কিনা এনিয়ে সন্দিহান ভাই আব্দুল ও বাবা মাহমুদুল।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
আরএম/ টিএ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।