ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আঞ্জুমান পাড়ায় ঘেরের আইলে শরণার্থী জীবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
আঞ্জুমান পাড়ায় ঘেরের আইলে শরণার্থী জীবন আঞ্জুমান পাড়ার চিংড়ি ঘেরে আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থী রোহিঙ্গারা; ছবি- দীপু মালাকার

আঞ্জুমান পাড়া, টেকনাফ, কক্সবাজার: টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে ৪০ কিলোমিটার গেলেই পালংখালি বাজার। সেখান থেকে ডান দিকের পাকা সড়ক দিয়ে নাফ নদীর দিকে ৩ কিলোমিটার এগুলেই আঞ্জুমান পাড়া গ্রাম। এ গ্রামের শেষ মাথায় এসে দাঁড়ালে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত ৩০ বর্গ কিলোমিটারের এক মাঠ। এর সামান্য কিছু অংশ ধানের ক্ষেত হলেও বাকি টুকু চিংড়ির ঘের। নাফ নদী থেকে খাল কেটে নোনা পানি এনে এইসব ঘেরে চিংড়ি ও কাঁকড়ার চাষ করেন এলাকাবাসী। কিন্তু গত তিনদিন হলো ঘেরের প্রায় অর্ধেকের বেশি পাড় ভরে  গেছে ঝুপড়ি ঘরে।

এলাকাবাসী বলছেন গ্রামের শেষ মাথা থেকে খালের পাড় ধরে মিয়ানমারের দিকে ১০/১২ কিলোমিটার হেঁটে গেলে নদীর পাড় ঘেষা ম্যানগ্রোভ বন। তারপর নাফ নদী।

তবে নদী এখানে বড় একটি খালের মতো। সম্প্রতি এই পথে আসতে শুরু করেছে মানব ঢল। দিনে ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। এখানে আসা মানুষগুলো আসছেন রাখাইনের অনেক ভেতর থেকে। এদের অনেকেই ৬ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত ছোট বড় ১০ থেকে ১৫টি খাড়া পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত অবস্থায় এসে পৌঁছেছেন। তবে এরা তুলনামূলক ভালোভাবেই এসেছেন।

আঞ্জুমান পাড়ায় গিয়ে দেখা গেলো, রোহিঙ্গাদের এই অস্থায়ী কেন্দ্রের গেটে বিজিবি চৌকি বসিয়ে রোহিঙ্গাদের আটকিয়ে রেখেছে। বালুখালির নতুন ক্যাম্পের জমি ঠিক হলেই তাদের এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। এই ক্যাম্পে যাতে কোন অঘটন না ঘটে সে জন্য আছে বিজিবির সার্বক্ষণিক টহল।  

আঞ্জুমান পাড়ার চিংড়ি ঘেরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারাবড় রাস্তায় দাঁড়ালে দেখা যায় পিঁপড়ার সারির মতো সারিবদ্ধ ভাবে আসছে মানুষের কাফেলা। এরা সবাই তাঁবু খাটিয়ে ঝুপড়ি তুলেছেন। যারা নতুন আসছেন তারাও সরু ঘেরের পাড়ে তাঁবু খাটিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছেন।  

আঞ্জুমান পাড়ার মাছের ঘেরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারাখোলা আকাশের নিচে দিন যাচ্ছে এই রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের। খুঁটি গাড়া হয়েছে কিন্তু ত্রিপল পায়নি এখনও..!

আঞ্জুমান পাড়ার মাছের ঘেরে আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা শরণার্থী শিশুদের কান্নায় ভারী টেকনাফের চারপাশ।

আঞ্জুমান পাড়ার চিংড়ি ঘেরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা পরিবারের সাথে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে শিশুরাও সাহায্য করছে বোঝা বহন করে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এই শিশুটি পেয়েছে একটি বিস্কুটের প্যাকেট স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে।

আঞ্জুমানপাড়ার চিংড়ি ঘেরে আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বালুখালিতে তৈরী হচ্ছে সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প। তাই আঞ্জুমান পাড়ার সীমান্ত পেরিয়ে আসা শরণার্থীদের সাময়িক ঠাঁই হয়েছে এখানেই। চারপাশেই পানি। মাঝখানের আইলে এক টুকরা ত্রিপল খুঁটিতে বেধে গাদাগাদি করে দিন পার করছে তারা।  

নামাজ আদায় করছেন এক রোহিঙ্গা শরণার্থী  এক রোহিঙ্গা মুসলিম আইলের টং-এ আসরের নামাজ আদায় করছেন।  

বাবার পিঠে এক রোহিঙ্গা শিশু বাবার পিঠে চড়ে আসা এক শিশুর অবাক চাহনি! 

 দশদিন হেঁটে এসে আঞ্জুমান পাড়ার এই চিংড়ি ঘেরে আশ্রয় নিয়েছে বৃদ্ধা রোহিঙ্গা দম্পতি মিয়ানমারের কোয়াং চিমন গ্রাম থেকে এই বৃদ্ধ দম্পতি দশ দিন ধরে হেঁটে এসেছেন আঞ্জুমান পাড়ায়।

রান্না হচ্ছে রোহিঙ্গা পরিবারে সীমান্তের ওপার থেকে কুড়িয়ে এনেছেন কিছু ডাল, কাঠ। এপারে এসে মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পেয়েই  হাড়িতে চাল চড়িয়েছেন পরিবারের ছয় সদস্যের জন্য।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।