প্রতিরাতে ৩২৫টি বোট চার থেকে পাঁচটি ট্রিপ মেরে ৩০ থেকে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পার করে এই বিপুল অর্থ কামিয়েছে। আগে যারা সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করতো, সেই সিন্ডিকেটই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা পারাপারের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
মিয়ানমারের মংডু ও রাচিডং এলাকার বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন নদী ও সাগর পথে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে। প্রতিদিনই সাগর ও নদীপথে শাহপরী দ্বীপ হয়ে আসছেন ৩০ থেকে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। এজন্য এদের কাছ থেকে বোট মালিকরা আদায় করছেন ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা করে যা মিয়ানমারের মুদ্রায় দুই থেকে তিন লাখ কিয়াট ( এক লাখ কিয়াট সমান বাংলাদেশের সাড়ে তিন হাজার টাকা)। আর নদী ও সাগর পার করা সবগুলো বোটের মালিকই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, কচুবুনিয়া, জাইল্যার দ্বীপ, খুরের মুখ, মহেষখালি পাড়া ও শামলাপুরের বাসিন্দা।
এক সময় এরাই সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করতো। তবে তাদের এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহপরীর দ্বীপেরই ঘাট মালিক ও কয়েকজন বোট মালিক। মংডুর বিভিন্ন ঘাট ও মিয়ানমারের নাইক্ষণ দ্বীপ থেকে বাংলাদেশে আসতে জড়ো হওয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে পার করছে এসব বোট। মিয়ানমারের কোন বোটই রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশে আসছে না।
মিয়ানমারের বুচিডং থেকে ৮ সদস্যর পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন রহিমউল্লাহ। নাইক্ষ্যণ দ্বীপ থেকে শাহপরীর দ্বীপে আসার পথে নাফ মোহনা পার করতে তার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ৪৮ হাজার টাকা। রহিমউল্লার মতো এপারে আসা সবার কাছ থেকেই গত এক সপ্তাহ ধরে আদায় হচ্ছে ৬ হাজার টাকা করে। এর আগের দুই সপ্তাহে নেওয়া হয়েছে জনপ্রতি ১০ হাজার বাংলাদেশি টাকা করে।
শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাসান বাংলাদেশে রোহিঙ্গা পার করা নৌকায় কাজ করেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলছিলেন, এমনিতেই তাদের বোট মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে গরু আনা নেওয়ার কাজ করতো। কিন্তু ঝামেলা হওয়ার পর থেকেই তারা মানুষ পার করার কাজ করছেন। এতে প্রতি রাতেই বোট মালিকের ঘরে যাচ্ছে কয়েক লাখ টাকা।
হাসান জানান নাইক্ষ্যণ দ্বীপ থেকে শাহপরীর দ্বীপের জলপথের দূরত্ব দেড় ঘণ্টা। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত তারা চার থেকে পাঁচটি ট্রিপ মারেন। প্রতিটি ট্রিপে তাদের বোটে ধরে ১০০ মানুষ। গাদাগাদি করেই তাদের আনা হয়। হাসান জানান বর্তমানে জন প্রতি ছয় হাজার টাকা করে আদায় হচ্ছে। সে হিসেবে ট্রিপ প্রতি আদায় হচ্ছে ৬ লাখ টাকা। আর ৫ ট্রিপ মারলে তা ৩০ লাখ বাংলা টাকা। প্রতি ট্রিপে ঘাট কর্তৃপক্ষকে দিতে হয় জনপ্রতি ১৩শ’ করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তারপরও খরচ বাদে বোট মালিকের থাকে ২০ লাখ টাকা থাকে প্রতি দিন।
তবে গোলা পাড়ার সৈয়দ মাঝি তার মাছ ধরা ট্রলার দিয়েই মানুষ পারাপার করছেন। তার ট্রলারে মানুষ ধরে ৩০ জন। কিন্তু বড় ট্রলারের চেয়ে একট্রিপ বেশি ট্রিপ মারা যায় ছোট ট্রলারে। সে হিসেবে প্রতি রাতে ৬ ট্রিপ মরে তিনি আয় করছেন ১০ লাখ টাকার ওপরে।
শাপরীর দ্বীপের জেটির ওপর কথা হচ্ছিল ঘাট শ্রমিক মামুনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, প্রথমে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে নিলেও জনস্রোত বাড়ায় টাকার পরিমাণ কমেছে। তবে আগে বিজিবিকে জনপ্রতি ৬০০ টাকা দিতে হলেও সীমান্ত উন্মুক্ত হওয়ায় তা বন্ধ হয়েছে।
তিনি বলছিলেন, মাছ ধরা বন্ধ করে কেবল মানুষ পার করেই কোটিপতি হয়েছে এখানকার বোটমালিকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
আরএম/আরআই