ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গাময় টেকনাফ, ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ আর!

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
রোহিঙ্গাময় টেকনাফ, ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ আর! ছবি: দীপু মালাকার। বাংলানিউজ

টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে: কবিগুরু লিখেছিলেন: ’ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ছোটো সে তরী/ আমার সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।’ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা শহরের অবস্থা এখন এমনই। কবির সোনার ধান না হলেও ছোটো সে তরীর মতো ছোট্ট শহরটি আজ ভরে উঠেছে ভিন দেশ থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসতে পারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভিড়ে। শহরের কোথাও যেন ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অফিস থেকে শুরু করে নির্মাণাধীন ভবন, মার্কেট, ব্যাংকের বারান্দা, বাসস্ট্যান্ড, বাজার, মসজিদ, বাসাবাড়ির বারান্দা, বাগান, সব স্থানেই কেবল রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই চারদিক থেকে আসছে আরো অসহায় মানুষের ঢল।

যার সঙ্গে কেবল মেলানো যায়, ৭১-এ ভারত যাওয়া বাংলাদেশী শরণার্থীদের ঢলকে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত এই মানবঢল আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকেরা।
ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছেন; ছবি: দীপু মালাকার
গতকালই (শনিবার) শাহপরীর দ্বীপের বদর মোকাম হয়ে নৌকায় করে পরিবার পরিজন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন মংডু জেলার জামবুনিয়া গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন। বিকেলেই তিনি চলে আসেন টেকনাফ শহরে। সাত সদস্যের এ দলটির স্থান হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। তাদের সঙ্গে এখানে আছেন আরো অন্তত শ-তিনেক মানুষ। তবে এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এদের মধ্যে আছেন সাখাওয়াত হোসেনের মতো কিছু ষাটোর্দ্ধ পুরুষও। রাতের বেলা নারীরা গাদাগাদি করে থাকলেও বেশিরভাগ পুরুষই রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন।

টেকনাফের যেখানে চোখ যায় কেবল রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা; ছবি: দীপু মালাকার

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিবারটি ছুটছে আশ্রয়ের খোঁজে; ছবি:দীপু মালাকারআওয়ামী লীগ অফিসের উল্টো দিকেই আছে নির্মানাধীন একটি বড় মার্কেট। এই মার্কেটের নীচতলা ও দোতলায় জায়গা হয়েছে আরো হাজার খানেক মানুষের। এদেরও বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সবাই পালিয়ে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন কিছু না কিছু সাংসারিক সরঞ্জাম। এদের কেউ কেউ মুচনি এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ বা যাচ্ছেন কাছাকাছির উচি প্রুং ক্যাম্পে। কেউ আবার আগেই আসা আত্মীয়ের সঙ্গে ছুটছেন বালুখালি, ল্যাদা, নয়াপাড়া বা কুতুপালং ক্যাম্পের দিকে।

এদেরই একজন মংডুর বুথিডং এলাকার জয়নাব বেগম। বাংলানিউজকে তিনি বলছিলেন, ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বালুখালি ক্যাম্পে ঘর তোলার জমি পেয়েছেন। মাসে মাসে জমির ভাড়া দিতে হবে ৫০০ টাকা করে। তবে সে টাকার জোগান কিভাবে হবে তা তিনি জানেন না। গত সেপ্টেম্বরে আসা ভাইস্তি জামাই তাকে এ জমির বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিবারটি ছুটছে আশ্রয়ের খোঁজে; ছবি:দীপু মালাকার
স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, নদীপথে আসা রোহিঙ্গারা প্রথমে টেকনাফ শহরে আসছেন। এরপর তারা দুই একদিন এখানে থেকে বিভিন্ন ক্যাম্পে চলে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৩৫টি গাড়ি ভরে রোহিঙ্গাদের স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয়রা খাবার ও পুরনো কাপড় দিয়ে সহায়তা করছেন। অনেকেই আবার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।

সকাল ৯টার দিকে দেখা গেল আওয়ামী লীগ অফিসে কয়েক বস্তা রুটি ও কলা নিয়ে এলেন স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সবার মধ্যে তা বিতরণও করা হলো। কিছুক্ষণ পরই এলও ডাল ও পরোটা। খাদ্য সামগ্রী বিতরণকারীদের কেউই পরিচয় প্রকাশ করতে রাজী হলেন না। তবে একজন জানালেন, মানবিক কারণেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যক্তিগত ভাবে সহায়তা করছেন তিনি।

এদিকে অতিরিক্ত এই মানবঢলে রুগ্ন হতে শুরু করেছে টেকনাফ শহরের পরিবেশ। মলমূত্র, খাবারের উচ্ছিষ্ট পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। যদিও সেদিকে পৌর কতৃর্পক্ষের কোনো নজর আছে বলে মনে হলো না।

বাংলাদেশ সময়:১১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
আরএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।