মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে দশটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢেকুরিয়া এলাকায় পানি চুইয়ে (সিপেস) বাঁধের পশ্চিম প্রান্তে আসছে। বাঁধের বিলচতল, ভুতবাড়ি, বানিয়াজানসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টেরও একই অবস্থা।
ভুতবাড়ি পয়েন্টে বালির বস্তা ফেলছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। ভ্যানযোগে বালিভর্তি বস্তা এনে বাঁধের পশ্চিম প্রান্তে বস্তা ফেলার কাজ করছেন তারা। বস্তা নেওয়ার কাজে সহযোগিতা করছেন বাঁধে আশ্রয় নেওয়া নারী-পুরুষ-শিশুরাও। কিন্তু ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি চোয়ানো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।
এদিকে পানির লেভেল ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বাঁধের জন্য ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।
সারিয়াকান্দি অংশে ঠিকাদার ও ধুনট অংশে ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন শ্যামল তালুকদারের পক্ষে সতর্কতা জারি করে মাইকযোগে প্রচারণা চালানো হয়। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের বাঁধ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তাদের এ পরামর্শে অনেকেই বাঁধ ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নতুন করে সেসব স্থানে আশ্রয় নেন নতুন বানভাসিরা।
রমিজা, শাহ জামাল, হোসনে আরা, লাইলী, আব্দুল জব্বারসহ বানভাসিরা বাংলানিউজকে জানান, রাতের আঁধারে যমুনা সবকিছু গ্রাস করে নিয়েছে। এক কাপড়ে বসত-ভিটা ছেড়ে আসতে হয়েছে তাদের। বাঁধ ছাড়া আপাতত আশ্রয় নেওয়ারও কোনো স্থান নেই। তাই ঝুঁকির কথা শোনার পরও এ বাঁধেই আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের মতো অনেক বানভাসি মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধের অনেক স্থান ধসে গেছে, অনেক স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম প্রান্তেই বেশিরভাগ গর্ত দেখা গেছে। এসব স্থানের ঠিক পূর্ব পাশেই যমুনার পানি এসে বাঁধের নিচে অবস্থান করছে।
বিকেলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমীন বাংলানিউজকে জানান, পানির লেভেল বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের ওপর ব্যাপক চাপ বাড়ছে। পাশাপাশি বন্যার্তরা আশ্রয় নেওয়ায় ওপর থেকে বাঁধে আরেক ধরনের চাপ পড়ছে।
তিনি আরো জানান, বাঁধে আশ্রিতরা বাঁশসহ বিভিন্ন ধরনের খুঁটি বাঁধের মাটিতে পুঁতে থাকার ঘর তৈরি করছেন। এতে বাঁধে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে গর্তগুলো বড় আকার ধারণ করছে। ইঁদুরের গর্ত তো রয়েছেই। ফলে বাঁধে একসঙ্গে পানি ও শত শত বানভাসি মানুষের চাপ পড়ছে। এসব কারণে বাঁধটি ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
প্রকৌশলী রুহুল আমীন জানান, সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেখানেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেখানেই পাইলিং বা বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। তবে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাঁধটিকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে কি-না- তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
এমবিএইচ/এএসআর