শহরের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে এমনিতেই যানজট লেগে আছে, এছাড়া রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ির কারণে পরিবহনগুলো চলাচলে আরো বিঘ্ন ঘটছে। সব মিলিয়ে বলা যায় চতুর্মুখী ‘অভিশাপে’ রাজধানীতে জনভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে।
সোমবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে ফার্মগেট মোড় ও মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর পর্যন্ত ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই তাপমাত্রা প্রখর, আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে যানবাহনও। ভোগান্তি থেকে রেহাই পাননি কর্মস্থলমুখী মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীও। এই সব এলাকাগুলোর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে দেখা যায় দীর্ঘ যানজট। এছাড়া পরিবহনগুলোতে সিট না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। উত্তপ্ত তাপমাত্রার মধ্যে পরিবহন না পাওয়া এবং আসন না পাওয়ার কারণে ভোগান্তির শেষ নেই নগরবাসীর।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মিরপুরের অবস্থা সব থেকে বেশি খারাপ। রাজধানীর এই এলাকাটির প্রায় সব রাস্তায় চলছে উন্নয়ন কাজ। আর উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে এলাকার অধিকাংশ রাস্তা চলছে খুঁড়াখুঁড়ির। ফলে অল্প পরিবহনেই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ১০-২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ২ ঘণ্টার মতো। এই সব সমস্যার কারণে এলাকাটির স্থানীয় বাসিন্দা ও যাতায়াত করা যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি গণ-পরিবহনে চলাচলে।
রাজধানীর গণ-পরিবহনের চতুরমুখী সমস্যা নিয়ে রাজধানীরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর গণ-পরিবহন সেবার ভোগান্তি যাত্রীদের ধৈর্য্যসীমার বাহিরে চলে গেছে। নিরুপায় হয়ে গণ-পরিবহনে চড়তে হয়। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকা, ভোগান্তি নিরসনে সরকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকা ও পরিবহন মালিকরা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে রাজধানীতে গণ-পরিবহনে ভোগান্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই কারণে কিছু বলে বা প্রতিবাদ করে লাভ হবে না জেনে সাধারণ যাত্রীরা অসহায়ের মতো এই ভোগান্তি সহ্য করছেন।
মিরপুরের পল্লবীর বাসিন্দা লুৎফর রহমান বাংলানিজকে বলেন, পরিবহন সেবার ভোগান্তি থেকে নগরবাসীর বাঁচার কোনো উপায় দেখছি না। সরকার ও পরিবহন মালিক পক্ষ কেউই আমদের কথা ভাবে না এবং শুনেও না। সে সঙ্গে রাস্তা ঘাটের যে বেহাল দশা গাড়ি চলবে কোথায়। এছাড়া পরিবহনগুলোতে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আসন সংখ্যা। আর সিটিংযের নামে অতিরিক্ত বাড়া আদায় তো আছেই।
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী হিরণ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি বাস নেই, আর বাস আসলেও থাকে না সিট। এই গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়বো। এক দিকে গাড়ি কম অন্য দিকে অল্প গাড়িতেই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এছাড়া গরম ও রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ির কারণে গণ-পরিবহন এখন ভোগান্তির বক্স।
গণ-পরিবহনের ভোগান্তি নিয়ে যাত্রীরা কেন প্রতিবাদ করছে না এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী উচ্ছ্বাস খান বাংলানিউজকে বলেন, সিটিং সার্ভিসের প্রতিবাদ করায় সরকার ও মালিক পক্ষ মিলে যে শিক্ষা দিয়েছিল নগরবাসীর এখনো মনে আছে। তাই প্রতিবাদ করে ভোগান্তির পরিমাণ বাড়াতে চাই না আমরা।
গত এক বছর ধরে রাজধানীতে বৃষ্টি হোক আর প্রচণ্ড গরমই থাক না কেন সব সময় রাজধানীবাসীকে গণ-পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হয়। বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা আর গরম থাকলে যানজটে নাজেহাল নগরবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
এমএ/বিএস