‘আপনারা জানেন ২৪ ঘণ্টা যাবত বিদ্যুৎ নেই। দু:সহ গরমে ঘরে টিকে থাকা যাচ্ছে না।
নজরুলের অনির্ধারিত বক্তব্য চলাকালেই কেওয়াটখালী মোড়লপাড়া এলাকার মুসল্লিরা দলে দলে জড়ো হলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক নম্বর গেটে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পাড়ার শিশু-কিশোররাও। ‘হই হই’ করে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল ছুটলো নগরীর কেওয়াটখালী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের দিকে।
এসব ঘটনা প্রবাহ রোববার (২৮ মে) রাত পৌনে ১১টার। এরপর আল্টিমেটাম দিয়ে সেখান থেকে গুটিকয়েক কর্মচারীদের আশ্বাসে ফিরে এলো স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা জানান, আশপাশের এলাকাগুলোতে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ অফিসে ছুটে গেলেও মিলছে শুধুই আশ্বাস। ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকায় ইফতারের আগে হঠাৎ নিভে যায় বিদ্যুতের আলো। সীমাহীন লোডশেডিংয়ের কারণে স্থানীয়রা পড়েছে দুর্বিষহ যন্ত্রণায়।
স্থানীয়রা জানায়, একটু বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ থাকে না। আর ঝড় হলে তো উপায় নেই। রমজানে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
বিদ্যুতের এ সমস্যা ও যন্ত্রণার চিত্রটি শুধু নগরীর কেওয়াটখালী বা সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকারই নয়, ভাটিকাশর, ডিবি রোড, আকুয়া, নওমহল, রহমতপুর, খাগডহর, গোহাইলকান্দি, পুলিশ লাইন, কাঁচিঝুলি ও হামিদ উদ্দিন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায়ও একই সমস্যা।
আর এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর ও দক্ষিণ শাখার অভিযোগ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরাও।
দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দক্ষিণের অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন রিসিভ করে ইলেকট্রেশিয়ান আব্দুল মজিদ চরম বিরক্তি নিয়ে বলেন, গরমে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ও জাম্পার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। এ কারণে অনেক এলাকাতেই বিদ্যুৎ থাকছে না। বিলম্ব হলেও লাইন মেরামত করে ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ নাই এমন অভিযোগের তো অন্ত নাই। এ নিয়ে কতোগুলো ফোন রিসিভ করেছি তাও মনে নাই। গুণে গুণে হিসাব করে বলতে হবে।
একই বিষয়ে ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ উন্নযন বোর্ডের উত্তরের অভিযোগ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হলে আব্দুল কাদের নামে একজন লাইনম্যান বলেন, গরমের কারণে যে যে এলাকায় ট্রান্সফরমারের ফেইজ নষ্ট হয়েছিল আমাদের লোকজন গিয়ে সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চোরাই বিদ্যুতের চার্জে ময়মনসিংহ নগরীতে চলছে প্রায় ১০ হাজার ইজিবাইক। এর প্রভাবে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের দুর্বিষহ যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে জেলার বাসিন্দাদের।
লাইসেন্স বিহীন এসব ইজিবাইকের ব্যাটারি রিচার্জ করতে চুরি করা বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। নগরীর পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে অবৈধ ইজিবাইকের গ্যারেজ।
অবৈধভাবে বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে ইজিবাইকের ব্যাটারি রিচার্জের কারণে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। স্থানীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর ও দক্ষিণের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতা দায়ী বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
তারা গ্যারেজ মালিকদের সঙ্গে গোপন রফায় নিজেদের পকেট ভারি করলেও লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণকে।
এসব বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ময়মনসিংহের প্রধান প্রকৌশলী ফকরুজ্জামানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ সময় ০৪৫০ ঘন্টা, মে ২৯, ২০১৭
এমএএএম/এসজেএ/আরবি/