ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইতিহাসের কাছে যাওয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
ইতিহাসের কাছে যাওয়া মুজিবনগর

মুজিবনগর (মেহেরপুর) থেকে: শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, স্বাধীন জাতিসত্তার জন্য বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রাম বিভিন্ন পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছিল।  সেই আন্দোলন-সংগ্রাম এমন এক দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা যার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস।  সেই ইতিহাসের আছে নানা গতিপথ, নানা বাঁক।

সেই ইতিহাসের একটি গতিপথ হচ্ছে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। দিনটিতে স্বাধীনতা অর্জনের পথে আরও একটি মাইলফলক অতিক্রম করেছিল বাংলাদেশ।

 ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। ওইদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম কামরুজ্জামান শপথ গ্রহণ করেন।  কর্নেল এমএজি ওসমানীকে সেনাপতি করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ১০ এপ্রিল গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও পাঠ করা হয়। এরপর বৈদ্যনাথতলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিবনগর। মুজিবনগর

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের তাৎপর্যপূর্ণ এই ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে এই আম্রকাননে গড়ে তোলা হয়েছে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স। প্রায় ৮০ একর জায়গাজুড়ে আছে স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র এবং মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের যুদ্ধকালীন ঘটনাবলির মানচিত্র।

স্মৃতিসৌধ মানেই যে শুধু ইট আর পাথরের বুনন নয়, এটি মুজিবনগর কমপ্লেক্স দেখে বোঝা যায়।   বরং প্রতিটি ইট আর পাথরের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস।   পা বাড়ালেই দেখা মেলে ইতিহাসের।   ফিরে যাওয়া যায় ৪৭ বছর আগে ১৯৭১ সালের সেই দিনটিতে।   ছুঁয়ে দেখা যায় ইতিহাস। মুজিবনগর

প্রায় ২০ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত স্মৃতিসৌধ এলাকা।  ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল যেখানে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক ইউসুফ আলী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে শপথ পাঠ করান, তা ২৪ ফুট বাই ১৪ ফুট আয়তাকার মঞ্চ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।

পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্থপতি তানভীর করিমের নকশায় স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে ২৩টি পিলার দিয়ে। ২৩টি পিলার পাকিস্তানের ২৩ বছরের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীন সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মুজিবনগর

স্মৃতিসৌধের বেদিতে আরোহণের জন্য রয়েছে ১১টি সিঁড়ি, যা মুক্তিযুদ্ধকালে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করার কথা মনে করিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে স্মৃতিসৌধের পাশেই তৈরি করা হয়েছে স্মৃতি কমপ্লেক্স। এই কমপ্লেক্সে একটি সবুজ মানচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টরের নানা ঘটনা।  এছাড়াও এখানে স্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালের নানা ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জির স্মারক ম্যুরাল।

সেখানে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণরত অবস্থার ম্যুরাল, মুজিবনগর সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভাস্কর্য, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানের দৃশ্য, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় গঠিত মুক্তিবাহিনীর ম্যুরাল, নিয়াজির আত্মসমর্পণের চিত্র, পাকিস্তানিদের নির্যাতনের নানা দৃশ্য। মুজিবনগরে  

বিরাটাকার দুটি পাকা দেয়ালে লিখে রাখা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ পত্র।

ইতিহাসের বর্ণাঢ্য ঘটনাবলির এই সম্মিলন দেখতে শুক্রবার (১৯ মে) বিকেলে মেহেরপুরে যান বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নেতারা।   তারা পুরো মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স ঘুরে দেখেন।

এসময় বিএফইউজের সভাপতি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মেহেরপুরের আম্রকানন যেটি পরে মুজিবনগর নামকরণ হয়েছে, এক ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থান।   পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালি যতদিন থাকবে, মুজিবনগরও থাকবে।   বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে মুজিবনগর জড়িয়ে থাকবে।

‘সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে এখানে একটি আধুনিক ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র বানানোর দাবি করছি।   ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে এখানে এসে মুজিবনগর সরকার এবং স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পায় সেজন্যই একটি তথ্যকেন্দ্র করা খুবই জরুরি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
টিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।