ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যেখানে উদিত স্বাধীনতার সূর্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
যেখানে উদিত স্বাধীনতার সূর্য মুজিবনগর। ছবি: মানজারুল ইসলাম

মুজিবনগর (মেহেরপুর) থেকে: নিজের মধ্যে একটা শিহরন টের পাচ্ছি। কোন ঐতিহাসিক স্থানে গেলে এমনটি হয়নি কখনও। যেমনটি হচ্ছে ঐতিহাসিক মুজিবনগরে এসে। শত বছরের প্রাচীন আম বাগানে আম পড়ার টুপটাপ শব্দ এখানকার ইতিহাস মনে করিয়ে দিচ্ছে।

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাঙালি জাতির অবিস্মরণীয় দিন।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ২১৬ বছর পর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পলাশীর আম্রকাননের অদূরে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়। এ মাটির বুকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছড়াছড়ি। স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুর।

প্রতিদিনের মতো শনিবারও (২০ মে) দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে। দূর-দূরান্ত থেকে বাস, মিনিবাস, নসিমন, করিমনসহ বিভিন্নভাবে দর্শনার্থীরা এসেছেন এখানে। মুজিবনগর।  ছবি: মানজারুল ইসলাম

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি কমপ্লেক্স, প্রশাসনিক ভবন, অডিটোরিয়াম ও প্লাজা, ছয় স্তর বিশিষ্ট গোলাপ বাগান, পর্যটন মোটেল, শিশু পরিবার, মসজিদ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্মৃতি ভাস্কর্য ঘুরে দেখেন দর্শনার্থীরা।

তবে দর্শনার্থীদের এখানকার প্রধান আকর্ষণ বাংলাদেশের মানচিত্র এবং আম বাগান। মানচিত্রের বুকে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে পৃথক করে দেখানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের হাতে উল্লেখযোগ্য ধংসযজ্ঞ। তার মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দেশের বেনাপোল, বনগাঁও, বিরল, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে শরণার্থী গমন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস, শালদাহ নদীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মুখ যুদ্ধ, কাদেরীয়া বাহিনীর জাহাজ দখল ও যুদ্ধ, পাক বাহিনীর সাথে কামালপুর, কুষ্টিয়া ও মীরপুরের সম্মুখ যুদ্ধ, শুভপুর ব্রিজের দুপাড়ের মুখোমুখি যুদ্ধ, চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দর ধ্বংস, পাহাড়তলী ও রাজশাহীতে পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, জাতীয় শহীদ মিনার ধ্বংস, জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলা, সচিবালয়ে আক্রমণ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও জগন্নাথ হলের ধ্বংসযজ্ঞ, তৎকালীন ইপিআর এর সদর দপ্তর পিলখানায় আক্রমণ, রায়ের বাজার বধ্যভূমি, বুদ্ধিজীবী হত্যার বিভিন্ন চিত্র। মুজিবনগর।  ছবি: মানজারুল ইসলাম

মুজিবনগর আম্রকাননকে ঘিরেই ইতিহাস। ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর আম্রকাননে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ গঠন এবং আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ হয়। এরপর মুজিবনগরকে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ঘোষণা দেওয়া হয়। এই আমবাগানের মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ, রেস্ট হাউজ, অবকাশ কেন্দ্র সূর্যোদয় ইত্যাদি।

স্মৃতিসৌধের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে লাল মঞ্চ, ২৩টি স্তম্ভ, বুদ্ধিজীবীর খুলি, ৩০ লক্ষ শহীদ, রক্তের সাগর এবং ঐক্যবদ্ধ সাড়ে সাত কোটি জনতা, স্বাধীনতার রক্তাক্ত সূর্যের মাধ্যমে লাল মঞ্চকে তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়েই অধ্যাপক ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন। ২৩টি স্তম্ভ হল ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসন, নিপীড়নসহ বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন ও স্বাধীনতার প্রতীক। স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে গোলাকার বৃত্তের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীর খুলি বোঝানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে ওঠার জন্য মোট ১১টি সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা যে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে যুদ্ধ করেছেন ১১টি সিঁড়ি সেই ১১টি সেক্টরের প্রতীক।
মুজিবনগর।  ছবি: মানজারুল ইসলাম
স্মৃতিসৌধের উত্তর পাশের আম বাগান ঘেঁষা যে স্থানটি মোজাইক করা আছে তা দিয়ে বঙ্গোপসাগর বোঝানো হয়েছে। যদিও বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের দক্ষিণে তবুও শপথ গ্রহণ মঞ্চটির সাথে স্মৃতিসৌধের সামঞ্জস্য রাখার জন্য এটিকে উত্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে।  

বরিশাল থেকে মা-বাবার সাথে ঘুরতে আসা স্কুল ছাত্র তপু ও কলেজ ছাত্র তুষার বলেন, ঐতিহাসিক এ স্থানে এসে ভালো লাগছে। আজকে অনেক দিনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ দোকানি আল-আমিন জানান, এখন পিকনিক মৌসুম নয় বলে লোকজন একটু কম। পিকনিক মৌসুমে এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৩-৪ শ’ বাস ভরে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসে।

মুজিবনগরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী আনসার ব্যাটালিয়নের প্লাটুন কমান্ডার আব্দুস সালাম বলেন, ঐতিহাসিক মুজিবনগরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসেন। আনসার ব্যাটালিয়নের ৫০ জন সদস্য এখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি জানান, শুধু দেশের পর্যটক নয়. বিদেশ থেকেও অনেক পর্যটক এখানে আসে। খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশন

বাংলাদেশ সময়:  ১২৪০ ঘণ্টা,  মে ২০, ২০১৭
এমআরএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।