ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাওরে দুর্যোগে নেই পাউবো-এলজিইডি!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
হাওরে দুর্যোগে নেই পাউবো-এলজিইডি! অসময়ের ঢলে তলিয়ে গেছে হাওড়াঞ্চল। পানির বিশ‍াল বিস্তৃতিতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত মাথা তুলে জেগে আগে ঘরবাড়ি; ছবি-অনিক খান

ইটনা (কিশোরগঞ্জ) ঘুরে: হাওরজুড়ে হাহাকার। খোরাকির ধান সব পানির নিচে। সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। অথচ হাওরবাসীর এ ঘোর দুর্দিনে মাঠে নামেনি হাওরের অবকাঠামো উন্নয়নের অপরিহার্য দুই সরকারি প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
 

এমনকি তাদেরকে মাঠে নামাতে হাওর সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোক্তারা বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ উপজেলা প্রশাসন থেকে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধসমূহ সংস্কার করতে একটি চিঠিও দেয়া হয়।



তবুও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টদের। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধসমূহ সংস্কারের বিষয়ে তাদের উদাসীনতা এখানকার মানুষজনকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।    

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, হাওর বেষ্টিত এ উপজেলায় ২৭ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে চলতি বছর বোরোর আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের হিসাব মতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট আবাদের ৭৫ ভাগই।

এসব জমির ফসল রক্ষার্থে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি’র আওতাধীন ইটনা উপজেলার হাওরে জিওলের বাঁধ, থানেশ্বরের সিজলি বাঁধ, জয়সিদ্ধির বিজয়ের  বাঁধ, মৃগার জনতাগঞ্জ বেড়ামাড়ী বাঁধ, ধনপুরের মলদাইরের বাঁধ, ধনপুর, বাদলা এন সহিলা, শিমুল বাগ টিয়ার কোনা, চন্দ্রপুর উপ প্রকল্প ও এলংজুরী বাঁধ রয়েছে।

এর মধ্যে সিজলি ও এলংজুরী বাঁধ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় কোনমতে টিকে আছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব বাঁধসমূহে সংস্কার ছোঁয়া না লাগায় প্রতি বছরই কম-বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে ফসল।

এবারো চৈত্র মাসে উজানের পাহাড়ি ঢল ও বাঁধ ভেঙে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আগেই উপজেলা প্রশাসন থেকে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধসমূহ সংস্কার করতে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একটি চিঠিও দেয়া হয়। এক সময় এখানেই ছিলো সোনালী ধানের ক্ষেত, ভারত থেকে আসা ঢলে যা এখন পানির নিচে;ছবি- অনিক খান
স্থানীয় হাওরবাসী জানায়, তারা আগেই উদ্যোগী হলে হাওরবাসীকে এভাবে সর্বস্বান্ত হতে হতো না। না খেয়ে মরার উপক্রমও হতো না।

সহিলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রতীন্দ্র গোপ (৬০) বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে বলেন, চোখের সামনে সব জমি তলিয়ে গেলো। সারা বছর খাওয়ার ধানটুকুও ভাগ্যে জুটলো না।

তারা আগে থেকেই তৎপর হলে বেশিরভাগ বাঁধই ভেঙে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হতো বলে জানালেন তিনি।

একই গ্রামের হরিজন ঘোষেরও ১০ একর জমির ফসল পাহাড়ি ঢলে বিলীন হয়েছে। তারও যতো অভিযোগ এ দু’সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রতি।

তিনি জানান, মেরামত না হওয়া বাঁধগুলোই আমাদের গলার ফাঁস হয়েছে। আর এর জন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি’র লোকজন।

স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মশিউর রহমান খান বাংলানিউজকে জানান, এসব বাঁধসমূহ মেরামত করতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ বাঁধসমূহে করা হয়েছে।

স্থানীয় জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাঁধে মাটি কেটেছে। আমরা নিয়মিত বাঁধ মনিটরিং করেছি। এ বাঁধগুলো ঠিক থাকলে ক্ষতির পরিমাণ ২৫ ভাগ কমতো।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের লোকজন সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।

পানি না কমলে শুষ্ক মৌসুমের আগে বেশিরভাগ বাঁধই মেরামত করা সম্ভব হবে না। হাওর এলাকার আগাম বন্যা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯ টি নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

একই ব্যাপারে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মাওলা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাঁধগুলো অনেক নিচু। এ কারণে আগাম বন্যায় বাঁধগুলোও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ পানি ঠেকানোর কোন উপায় ছিল না।

হাওরে আমাদের প্রজেক্টের লোকজন প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখছেন। শুষ্ক মৌসুমে এ বাঁধগুলো আরো উঁচু করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি।

বাংলাদেশ সময় ১০৩১ ঘন্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
এমএএএম/আরআই

আরও পড়ুন:

** ‘হাওর ভাত দেয় না, গৃহস্থরেই মারে’
** শুন্য হাতে ফিরছেন ‘জিরাতিরা’
** হাওরে বিদ্যুৎ যায় না, আসে!
** চোখ-নদীর জল একাকার হাওরের জলে!
** হাওরে কৃষকদের দুর্দিনে মাথায় হাত চাটাই ব্যবসায়ীদের

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।