ঢাকা, রবিবার, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৬ মে ২০২৪, ১৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

স্বপ্নপূরণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার অপেক্ষায় ফরিদপুরবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
স্বপ্নপূরণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার অপেক্ষায় ফরিদপুরবাসী প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত ফরিদপুর

ফরিদপুর: বুধবার (২৯ মার্চ) ফরিদপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ছাড়াও ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠের জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।   

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন স্থানে সাজ-সজ্জা, রাজেন্দ্র কলেজ মাঠের প্রাচীর ভেঙ্গে নিচু স্থান ভরাট করা, শহরের ডিভাইডার সড়কের রং করাসহ নানা প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ।

বিকেল ৩টায় রাজেন্দ্র কলেজের শহর শাখার মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১২টি নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ফরিদপুর সফর। বহুল প্রতীক্ষিত এ সফর নিয়ে ফরিদপুরবাসী উদ্বেলিত। অনেক প্রত্যাশার দোলাচলে ফরিদপুর বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় পদ্মাসেতু আর বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা শোনার অপেক্ষায় তারা।

রঙ-বেরঙ্রে আলোকোজ্জ্বল রাতের ফরিদপুরফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লোকমান হোসেন মৃধা বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাজেন্দ্র কলেজ মাঠের জনসভায় শেখ হাসিনা নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সবগুলো আসন উপহার দিলে ফরিদপুরবাসীর সকল প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব তার নিজের। শেখ হাসিনার জন্মস্থান অবিভক্ত ফরিদপুর জেলার গ্রামে। নিজ জেলাকে বিভাগ ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করবেন বলেই আশা করছি’।

তিনি আরো বলেন, ‘পদ্মাসেতু প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এ মহাযজ্ঞে সেসব ভারি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে, পদ্মাসেতু নির্মাণ শেষে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মিত হলে অর্ধেক খরচ পড়বে। কম খরচে সেতু নির্মাণের এ সুযোগ সরকার নিশ্চয়ই হাতছাড়া করবে না’।

মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দীন মোল্যা বলেন, ‘বৃহত্তর ফরিদপুর ভেঙ্গে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলা হয়েছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষী ফরিদপুর জেলা বিভাগ হবে- এ চাওয়া নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী পূরণ করবেন’।

এলজিআরডি মন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত কয়েক বছর ধরে সভা-সমাবেশে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের কথা বলেছেন। ফরিদপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার কাজও শুরু হয়েছে। পৌর এলাকার সীমানা ১৭ দশমিক ৩৮ বর্গকিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৬৬ দশমিক ৪৪ বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে।

ফরিদপুর পৌরসভার সচিব তানজিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ফরিদপুর পৌরসভার এলাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠাই গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। সে প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দিয়েছে। বর্ধিত আকারে ফরিদপুর পৌরসভার নতুন এলাকা রাষ্ট্রপতির গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে’।

শিক্ষাবিদ প্রফেসর আলতাফ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ফরিদপুরকে আরও সমৃদ্ধ করতে স্বতন্ত্র একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিকল্প নেই। আশপাশের জেলাগুলো থেকে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা তখন ঢাকামুখী না হয়ে ফরিদপুরমুখী হবে। আধুনিক বিষয়গুলো পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ফরিদপুরের শিক্ষার্থীরা প্রতীক্ষার প্রহর গুণছে আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা শোনার’।

ফরিদপুরে স্পেশালাইজড ইকোনমিক জোন (বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল) গড়ে তোলার প্রস্তাবনা পেশ করেছে ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। সংগঠনটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রস্তাবনায় সায় পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা আমাদের। এটি করা হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে’।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, ‘জাতির জনকের জন্মভূমি ফরিদপুর অবহেলিত ছিল। জেলাবাসীর এসব যৌক্তিক দাবি আওয়ামী লীগ সরকার রাখবে বলেই বিশ্বাস করি’।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

রঙ-বেরঙ্রে আলোকোজ্জ্বল রাতের ফরিদপুরপ্রধানমন্ত্রী যে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন সেগুলো হচ্ছে- ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন সংগ্রহশালা, ফরিদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলোজি, শিশু একাডেমি, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহা পরিদর্শকের কার্যালয়, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ফরিদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের একাডেমিক কাম পরীক্ষা হল, সদর উপজেলার চর কমলাপুর খেয়াঘাট থেকে বিলমামুদপুর স্কুল সড়কে কুমার নদীতে ৯৬ মিটার আরসিসি ব্রিজ, ভাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নয়ন, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, বিএসটিআই ভবন, ভাঙ্গা থানা ভবন, মধুখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদর উপজেলা থেকে বাখুণ্ডা জিসি হয়ে রসুলপুর ভায়া চরনিখুরদি সড়ক,  সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মুন্সিডাঙ্গী কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ৩৩/১১ কেভি হারুকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র।

আর যে ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন সেগুলো হচ্ছে- কুমার নদ পুনর্খনন, আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পুলিশ হাসপাতাল, পুলিশ অফিসার্স মেস, সালথা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন, চন্দ্রপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের ছাত্রী নিবাস, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ১৫০০ আসন বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হল রুম, সালথা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন প্রকল্প।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭  
আরকেবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।