ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহে মরছে প্রাণী!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহে মরছে প্রাণী! প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহে মরছে লেয়ার মুরগি/ছবি: বাংলানিউজ

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহে মড়ক লেগেছে মুরগির খামারে। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে একসময় সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যাওয়া মুরগির নিথর দেহগুলো দিকে তাকাতে বড় কষ্ট হয় ব্যবসায়ীদের। নিজ হাতে ছোট থেকে বড় করে তুলেছেন তারা। স্থানীয় ডাক্তার বা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা যা বলেন তা-ই তারা করছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কোনো চিকিৎসাতেই মুরগির মড়ক ঠেকানো যাচ্ছে না।

সপ্তাহব্যাপী এ মড়ক অব্যাহত থাকলেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের নেই কোনো কার্যকর ভূমিকা। একই রোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ব্যবহারেরও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। পাচ্ছেন নানান ভয়-ভীতি। এতে অনেক খামারি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হয়েছেন।

সেবার বিপরীতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এক উচ্চতর কর্মকর্তার ‘প্রটোকল’ নিয়ে অধিক ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরামর্শ বা সেবা নিতে আসা লোকদের সঙ্গে কথা বলাও সময় নেই তাদের!

এই ওষুধ খেয়েই মরা শুরু করে মুরগিগুলো/ছবি: বাংলানিউজ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ-২০১৭’ এর উদ্বোধন করেন।  

জানা যায়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) ডা. আবতাবুন নাহার সোমবার শ্রীমঙ্গল উপজেলাতে আসায় মহাব্যস্ত হয়ে পড়েন ছোট-বড় কর্মকর্তারা।

এদিকে, লেয়ার মুরগি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে দু’টি স্থানে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন সংবাদ সংগ্রহে গেলে ‘সাংবাদিককে কেন খবর দিলেন?’ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষে কাছ থেকে এ প্রশ্নসহ নানা কথা শুনতে হয় দুই ভুক্তভোগীকে।      

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহে মরছে লেয়ার মুরগি/ছবি: বাংলানিউজপরে ভুক্তভোগীরা নিউজটি প্রকাশ না করার অনুরোধসহ শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, নিউজটি প্রকাশিত হলে হয়তো উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষ আরো বিরক্ত হয়ে তাদের সহযোগিতা করা বন্ধ করে দিবেন।

আশিদ্রোন ইউপি’র সুখবাস গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার খামারে গিয়ে দেখা যায় সোমবার সকালেই ৩৬টি লেয়ার মুরগি মরেছে। তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০টি মরেছে। আমার এই খামারে ১ হাজার ৮৩৭টি মুরগি ছিল।

তিনি আরো বলেন, ১ দিনের বাচ্চা থেকে সাড়ে ৫ মাস (ডিম পাড়ার আগ পর্যন্ত) আমার মোট খরচ হয়েছে প্রায় পনের লাখ টাকা। ২০১৫ সালের নভেম্বর এটি চালু করেছি। মুরগিগুলো ১৮ মাস পর্যন্ত ডিম দিবে। ডিম শেষে মুরগিগুলোকে ৩০০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।

ওয়াহিদ মিয়া বলেন, আমার ডিম দেয়া মুরগিগুলো মরছে। আজই ৩৬টি মুরগি মরেছে। আরো পাঁচলাখ টাকা উঠার বাকি। এভাবে মুরগি মরতে থাকলে আমি পথে বসে যাবো। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস নাভানা কোম্পানি ‘নাভামক্স-ভেট’ ১০০ গ্রামের প্যাকেট এবং এসকেএফ কোম্পানির ‘এসকলিস-২৪’ ৫০০ গ্রামের জার এই দু’টো এন্টিবায়োটিক লিখে দিয়েছে, আমি কিনে এনেছি। কিন্তু মুরগিগুলো তো সুস্থ হচ্ছে না।

সাতগাঁও ইউপি’র লাহারপুর গ্রামের লেয়ার মুরগি ব্যবসায়ী ফুল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, SI CHLOR-T  500gm এ ট্যাবলেটটি ড্রামের পানিতে খাওয়ার পর থেকেই আমার মুরগিগুলো মরতে শুরু করে।

খামারের পরিচালক বাবুল মিয়া বলেন, আমাদের এগারোশ মুরগি ছিল। এই কয়দিনে ছয়শত মরেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারিতে ৬টা মুরগি প্রথমে মারা যায়। তারপর থেকে প্রতিদিনই মরছে।

উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অফিসে একজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন, এমন দোহাই দিয়ে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করতে বলেন।

মুরগির মড়ক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি পোস্টমর্টেম করে খুবই সাধারণ কিছু রোগ পেয়েছি। নামগুলো হলো সালমনেলা, পরিবেসিলসিস, ইকোলাই, মাইক্রোপ্লাজমা। গত দু’মাস থেকে প্রতিরোধের জায়গাও তাদের গাফিলতি রয়েছে।

কিছু ভাইরাস রোগ রয়েছে যার কোনো চিকিৎসা নেই। এতে একশ ভাগ মুরগিই মারা যেতে পারে বলে জানান উপজেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।