ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকায় প্রণব: ১শ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তা চুক্তি সই

জসীম উদ্দীন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১০
ঢাকায় প্রণব: ১শ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তা চুক্তি সই

ঢাকা: ভারতের কাছ থেকে ১শ কোটি ডলার ঋণসহায়তা নেওয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বিকেলে ঢাকায় আসার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে বার্ষিক ১.৭৫ শতাংশ হার সুদে ঋণ সহায়তার এ চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।



বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া ও ভারতের পক্ষে দেশটির এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকের (এক্সিম) চেয়ারম্যান টিসিএ রঙ্গনাথন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসময় উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। তিনি জানান, তার দেশ ভারত বাংলাদেশের কাছে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ মেট্রিক টন গম রপ্তানি করবে।

এছাড়া সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ দমনে দুই দেশকে একসঙ্গে আরো জোরদার ভূমিকা পালনের আহবান জানান প্রণব মুখার্জি।

বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে ট্রানজিটের আওতায় ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে নেপালের ট্রাক বাংলাদেশে আসতে পারবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে ভারত এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ’  

চুক্তি স্বাক্ষরের পর সন্ধ্যায় প্রণব মুখার্জি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার রাষ্ট্রীয় বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। তিনি রাত সাড়ে ৯টায় দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।

ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, চুক্তির অর্থে বাস্তবায়নের জন্য ১৪টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। আশা করি আমরা এ অর্থের সদ্বব্যবহার করতে পারবো।

তিনি বলেন, ভারত হয়ে নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে এবং মায়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে ট্রানজিটকে আমরা সব সময় সমর্থন ও স্বাগত জানাই। এসব ট্রানজিট আমাদের জন্য উপকারী হবে।

ভারতের সঙ্গে এ চুক্তির বিরোধিতা করায় বিএনপির সমালোচনা করে আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বর্তমান বিশ্বে কেউ এত কম সুদে ঋণ দেয় না। তারপরেও বিরোধী দল কেন এর বিরোধিতা করছে জানি না। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য যুক্তিযুক্ত নয়।

এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি পৃথকভাবে ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা পৌঁছান প্রণব মুখার্জি। হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এসময় ভারতীয় মন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিমানবন্দরে পৌঁছে সংক্ষিপ্ত প্রেস বিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘এককভাবে কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের এটি সবচেয়ে বড় ঋণ-সহায়তা চুক্তি। ’

ঋণের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত থাকছে তা বাংলাদেশের জন্য সহনীয় হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ দুই দেশের মধ্যে দ্রুত সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ চুক্তি কাজে আসবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, এই ঋণের পুরোটাই খরচ করা হবে বাংলাদেশের রেলওয়ে ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে।   চুক্তির অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশকে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি (গৃহিত প্রকল্পের চুক্তি অনুমোদনের ১২ মাস পর থেকে অব্যবহৃত ঋণের উপর ধার্য করা হবে) দিতে হবে।

বাংলাদেশকে ২০ বছর মেয়াদে (৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ) এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

বিমানবন্দর থেকে প্রণব মুখার্জি হোটেল সোনারগাঁও-এ যান। সেখান থেকে তিনি বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় পৌঁছান ।

জানুয়ারিতে হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠকের পর ঢাকায় ভারতের কোনো মন্ত্রীর এটাই প্রথম সফর।

বাংলাদেশের জন্যও ভারতের এতো বড় অংকের ঋণ-সহায়তা এটাই প্রথম। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
 
জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে দুই দেশের মধ্যে রেল, সড়ক ও নদীপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সহজ করতে ঋণ সহায়তার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

এদিকে ঋণের টাকা সঠিকভাবে কাজের লাগানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে ১৪টি প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছেন। এসবের মধ্যে ১০টি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের, যেগুলোর ৫টি আবার রেলওয়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত। এর মাধ্যমে রেলওয়ের ট্যাং ওয়াগন, বগিসহ সরঞ্জামাদি কেনা হবে। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জে দুটি নতুন রেলসেতু তৈরি করা হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ও চীন সফর বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। বাংলাদেশ যেন এ অর্জন কাজে লাগাতে পারে প্রতিবেশি দেশ হিসাবে ভারত সেটাই চায়।

এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ যে সরাসরি ভূমিকা নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন শুধু দুই দেশের অঙ্গীকার নয়, সার্কেরও অঙ্গীকার। দুই দেশ একযোগে কাজ করলে আমার বিশ্বাস এ সমস্যার সমাধান হবে।

এছাড়া দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন তিনি।

বাংলাদেশ ও ভারত হয়ে নেপাল, ভূটানসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ট্রানজিট চালুর বিষয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, দ্রুতই ট্রানজিট চালু করতে পারব বলে আমি আশাবাদী।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্তে স্থল শুল্ক স্টেশন স্থাপন, মেঘালয় সীমান্তে দুইটি বর্ডার হাট স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সীমান্তনদী তিস্তার পানিবন্টন চুক্তির প্রশ্নে প্রণব মুখার্জি বলেন, চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) একমত হয়েছে। এ লক্ষ্যে খসড়া চুক্তিও আদান প্রদান হয়েছে। আশা করি দ্রুতই এ বিষয়টির সমাধান হবে।

ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ভারতে বাংলাদেশের অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। আরো অনেক পণ্য এ সুবিধা পাওয়ার অপেক্ষামান তালিকায় রয়েছে।

ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক বিলিয়ন ডলার ভারতীয় ঋণের অর্থে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পসমূহের তালিকা সরবরাহ করা হয়। এতে বলা হয় ১৪ টি প্রকল্পে ৬০১.৮৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘন্টা, আগস্ট ৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।