ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

দেশে মাদকসেবী দেড় কোটি, মাদকবিক্রেতা ৩০ লাখ

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
দেশে মাদকসেবী দেড় কোটি, মাদকবিক্রেতা ৩০ লাখ প্রতীকী ছবি

ঢাকা: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি মাদকসেবী রয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি মাদকাসক্ত।

প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে থাকেন তারা। এ হিসাব অনুযায়ী, মাসে তারা প্রায় ৬শ’ কোটি টাকার মাদক সেবন করেন।

অন্যদিকে, দেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা করে থাকেন। দেশে শতকরা ১০ জন নারী মাদকাসক্ত, এদের মধ্যে তিন জন গৃহবধূ।
 
সূত্র মতে, বর্তমানে সমাজের বেশিরভাগ অপরাধের মূলে রয়েছে মাদক। চুরি-ছিনতাই, ধর্ষণ-খুনসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মূলেও রয়েছে মাদকাসক্তরাই।
 
মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতেই এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। বর্তমান সমাজে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এই মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা, সেই সঙ্গে তারা নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
 
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, শতকরা ৮০ শতাংশ খুনের সঙ্গে মাদকাসক্তরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
 
একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইয়াবা ট্যাবলেটের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ। এর মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। এসব মাদকাসক্ত ব্যক্তির দ্বারা খুন-ধর্ষণ ও অপহরণের মতো নানান অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।
 
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, পেশাদার খুনীদের শতকরা ৯৭ শতাংশ মাদকাসক্ত। মানুষ হত্যার পর মস্তিষ্ক থেকে সেই দৃশ্য ভুলে থাকতেই তারা সেবন করছেন বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।
 
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোট ১৫০টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার মাদকাসক্ত চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। যার মধ্যে ৯ হাজারের বেশি ইয়াবাসেবী। সারা দেশে প্রায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ ইয়াবার নেশায় আশক্ত। এর মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই যুবক-যুবতী।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তরুণ সমাজ হতাশা থেকেই বেশি মাদকাসক্ত হচ্ছেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা পেলে তারা চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত হবে।
 
তিনি বলেন, মাদকসেবীদের চিকিৎসার জন্য দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আলাদা কোনো ইউনিট নেই। আলাদা ইউনিট করা গেলে মাদকাসক্তদের আরও উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাবে।
 
সারা দেশে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র বৃদ্ধির জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বাংলানিউজকে বলেন, সমাজে নানা কারণে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে মাদক একটি। ছিনতাই, পারিবারিক কলহ, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্ব- এগুলোর মূলে মাদকই দায়ী।
 
রাজধানীতে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একধিক টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
 
তিনটি বিষয়ে সামনে রেখেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কাজ করছে জানিয়ে এর ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক খুরশিদ আলম বলেন, মাদকের চাহিদা হ্রাসের জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো, মাদকদ্রব্যের জোগান বন্ধ করতে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা, মাদক সেবনের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের আবার সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রচারণা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছি আমরা। আমাদের টার্গেট মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে তা ভেঙে দেওয়া। সেই সঙ্গে মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া।   তবে শুধু আইনের মাধ্যমে দেশ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য পরিবার ও সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে এর কুফল সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে।
 
তিনি আরও বলেন, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া, দেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধ, ওষুধ ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার্য বৈধ মাদকের শুল্ক আদায় সাপেক্ষ আমদানি, পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্যের সঠিক পরীক্ষণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরোধ শিক্ষা কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে নিবিড় কর্ম-সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা- এসব মিশন নিয়ে কাজ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসজেএ/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।