ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফাঁসিতে ঝুললেন সাকা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
ফাঁসিতে ঝুললেন সাকা যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী

ঢাকা: ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে একাত্তরের নৃশংসতম যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীকে। শনিবার (২১ নভেম্বর) দিনগত রাত বারটা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তার।



একই সঙ্গে একই ফাঁসির মঞ্চে পাশাপাশি ফাঁসি দেওয়া হয়েছে অপর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী একাত্তরের আলবদর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকেও।

সাকা চৌধুরী ছিলেন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের মন্ত্রী। ছিলেন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিএনপির প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টাও। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে ছয়বার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। অন্যদিকে মুজাহিদ ছিলেন বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী।

প্রথমবারের মতো একইসঙ্গে পাশাপাশি ফাঁসির মঞ্চে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দুই সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টার ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় দেশের জন্য রচিত হলো আরও একটি নতুন ইতিহাস।

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের ফাঁসি কার্যকরের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসি দেওয়া হলো সাকাকে। এখন পর্যন্ত রায় কার্যকর হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা পাওয়া অপরাধের মধ্যেও এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা-গণহত্যা, ব্যাপক নিধনযজ্ঞ, দেশান্তর, নির্যাতন, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন করে হত্যা, ষড়যন্ত্রের মতো বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে।

এর মধ্যে সাকা চৌধুরীকে যে চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসির কাষ্ঠে যেতে হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবক-দানবীর অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যা, রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০-৫৫ জনকে গণহত্যা, এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যা। ট্রাইব্যুনালে সাকার বিরুদ্ধে আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে এসব অভিযোগ ছিল যথাক্রমে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে।

আরও চারটি অপরাধে আদালত সাকাকে ৫০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিলেও সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হওয়ায় সেসব সাজা ভোগের প্রয়োজন পড়েনি।

অন্য চার অপরাধের দণ্ডাদেশের মধ্যে রাউজানের গহিরা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় গণহত্যা(২ নম্বর অভিযোগ) ও জগৎমল্লপাড়ায় ৩২ জনকে গণহত্যার(৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ২০ বছর করে ৪০ বছর এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে নির্যাতন(১৭ নম্বর অভিযোগ) এবং চান্দগাঁওয়ের সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে সাকা চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতনের (১৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ৫ বছর করে আরো ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় সাকাকে।

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এটি হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তৃতীয় ফাঁসির রায় কার্যকর, যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হলো চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর।

শনিবার রাতের মধ্যেই সাকা চৌধুরীর মরদেহ চট্টগ্রামের রাউজানে নিয়ে তার পরিবার পরিজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রোববার (২২ নভেম্বর) ভোররাতে রাউজানের গহিরার স্থায়ী বাসিন্দা সাকা চৌধুরীর নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে তার পারিবারিক কবরস্থানে। সাকার পারিবারিক সূত্র জানায়, বাবা ফজলুল কাদের ফকা চৌধুরী ও সদ্যপ্রয়াত ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরের পাশে তাকে কবর দেওয়া হবে। এ কবরস্থানে আরও শায়িত আছেন সাকার দাদা-দাদি ও মাসহ অনেক স্বজন। কারাগারের অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় রাউজানে পাঠানো হবে মরদেহ।

চতুর্থজন হিসেবে একই সময়ে ফাঁসির দড়িতে ঝোলা অপর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে। পাশাপাশি সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার মাধ্যমে হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটনার দায়েও সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ।

গত ১১ এপ্রিল রাত দশটা ৩১ মিনিটে ফাঁসি দেওয়া হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। দ্বিতীয় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে একাত্তরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল জুড়ে নারকীয় সব যুদ্ধাপরাধের হোতা আলবদর বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব কমান্ড কামারুজ্জামান ফাঁসিতে ঝোলেন শেরপুর জেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৬৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে প্রথমবারের মতো ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল জামায়াতেরই অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার। ‘মিরপুরের কসাই’ স্থানীয় আলবদর কমান্ডার কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল রাত দশটা এক মিনিটে। সপরিবারে মিরপুরের হযরত আলী লস্কর হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলেন তিনি।

অন্য যুদ্ধাপরাধীদেরও আরও কয়েকটি করে অপরাধে আদালত যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডাদেশ দিলেও সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হওয়ায় সেসব সাজা ভোগের প্রয়োজন পড়েনি।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা। তবে সর্বোচ্চ সাজার প্রেক্ষিতে আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।
 
গত ২৯ জুলাই ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর তাকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।
 
নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই গত ১৪ অক্টোবর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন সাকা চৌধুরী। গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে এ আবেদন খারিজ করে সাকা চৌধুরীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রিভিউ আবেদন করার পর সাকার মৃত্যু পরোয়ানা স্থগিত ছিল। রিভিউ খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর তা ফের বহাল হয়।  

রিভিউ রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ফাঁসি দড়ি এড়াতে তার সামনে একটাই পথ ছিলো রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। রিভিউয়ের রায় পড়ে শোনানোর পর দুই দফা তাই তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, তিনি দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কি-না। তখন থেকে আইনজীবী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানোর জন্য সময় চেয়ে দু’দিন কাটিয়ে দেন এই বিএনপি নেতা। সর্বশেষ শনিবার সকালে তার কাছে আবারও শেষ সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়। দুপুরে সিদ্ধান্ত জানতে যাওয়া ঢাকা জেলা প্রশাসনের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট ও কারা কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার লিখিত আবেদনপত্র তুলে দেন সাকা। এ সময় মুজাহিদও তার প্রাণভিক্ষা চান রাষ্ট্রপতির কাছে।   

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এই প্রথমবারের মতো নিজেদের একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েই এ আবেদন করেছিলেন পাকিস্তানি সেনাদের এই দুই অন্যতম প্রধান দোসর। মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও এর বিচার নিয়ে হুঙ্কার ছাড়া দু’জন অপরাধীর এ স্বীকারোক্তিও দেশের ইতিহাসে আর একটি যুগান্তকারি ঘটনা।

শনিবার রাতে মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় ও সশস্ত্র বিরোধিতাকারী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনা নাকচের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারাগারে পৌঁছায় মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করতে সরকারের নির্বাহী আদেশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সে আদেশও তাদেরকে পড়ে শোনানো হয়। এর পর থেকেই শুরু হয় ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি।

এরপর রজনীগন্ধা কনডেম সেলে গিয়ে সাকাকে গোসল করিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। জীবনের শেষ খাবার হিসেবে সাদা ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস, সবজি ও ডাল খান তিনি।

রাতেই সাকার স্ত্রী-পুত্র-পরিজনকে শেষবারের মতো তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। রাত নয়টা ৩৫ মিনিট থেকে দশটা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ১৮ জন স্বজন কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে শেষ সাক্ষাৎ করেন।

স্বজনদের সাক্ষাতের পর কারাগারের মাওলানার মাধ্যমে তওবা পড়িয়ে নেন কারা কর্তৃপক্ষ। এ সময় তার কাছ থেকে তার শেষ কোনো কথা থাকলে তাও শুনে নেন কারা কর্মকর্তারা।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধর্মীয় রীতি অনুসারে তওবা পড়ান কেন্দ্রীয় কারাগার মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মনির হোসেন। এর আগেই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন কারা চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব।

সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির রাতেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে সাকাকে জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, এটাই আপনার শেষ রাত। এখন আপনাকে তওবা পড়তে হবে।
 
মাওলানা মনির হোসেন তাকে বলেন, আপনার কৃতকর্মের জন্য আদালত আপনাকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন। আপনি একজন মুসলমান ব্যক্তি। এ কারণে আপনি আল্লাহ’র এই দুনিয়ায় কৃতকর্মের জন্য তওবা করেন।
 
এরপর ইমাম সাহেব তাকে তওবা পড়ান। তওবা পড়ার মিনিট চারেক পর কনডেম সেলে জল্লাদরা আসেন। তারা সাকা চৌধুরীকে নিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চে। আগে থেকেই মঞ্চের পাশে রাখা ছিল মরদেহ বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স।

রাত বারটা ৩৬ মিনিটে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়ার পর তার মাথায় পরানো হয় একটি কালো রংয়ের টুপি। এই টুপিটিকে বলা হয় ‘যমটুপি’।

ফাঁসির মঞ্চে তোলার পর সাকার দুই হাত পিছন দিকে বাধা হয়। এ সময় ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত ছিলেন কারা কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ফাঁসির মঞ্চে প্রস্তুত ছিলেন জল্লাদও। মঞ্চে তোলার পর তার দুই পাও বাধা হয়। পরানো হয় ফাঁসির দড়ি।

কারা কর্তৃপক্ষের হাতে ছিল একটি রুমাল। রুমালটি হাত থেকে নিচে ফেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই  জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চের লিভারে টান দেন। লিভারটি টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফাঁসির মঞ্চের নিচে চলে যান সাকা। এ সময় তিনি মাটি থেকে ৪-৫ ফুট শূন্যে ঝুলে থাকেন। এতে মুহূর্তের মধ্যেই তার ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মুজাহিদের মরদেহ আগে তোলা হয়। পরে তোলা হয় সাকার মরদেহ।

পরে কারা চিকিৎসক ডা. বিপ্লব কুমার ও আহসান হাবিব, ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন আবদুল মালেকের তত্ত্বাবধানে ময়না তদন্ত হয়। এ সময় তাদের ঘাড়ের রগ কাটা হয়।

সাকা চৌধুরীর ফাঁসির লিভারে টান দিয়ে ঐতিহাসিক এ দায়িত্ব পালন করেন প্রধান জল্লাদ শাহজাহান। অন্য তিনজন জল্লাদ ছিলেন তার সহযোগী। জল্লাদ শাহজাহান এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরেও জল্লাদের ভূমিকা পালন করেন।

ফাঁসি কার্যকর করার সময় ফাঁসির মঞ্চে ও কারাগারের ভেতরে ছিলেন আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলমসহ অন্য কারা কর্মকর্তারা।

ছিলেন ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকার সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা, কারাগারের চিকিৎসক ডা. আহসান হাবিব ও ডা. বিপ্লব কুমার, দুই ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ ও মোহাম্মদ মুশফিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং ডিএমপি কমিশনারের প্রতিনিধি ডিসি-ডিবি (নর্থ) শেখ নাজমুল আলম।

ডিএমপি’র জয়েন্ট কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শেখ মারুফ হাসান, র‌্যাবের ইন্টিলিজেন্স প্রধান প্রতিনিধি এবং ডিবি’র বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের প্রতিনিধিও ছিলেন কারাগারে।

সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সন্ধ্যায় জেলখানার মূল ফটক ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চারদিকে তিন স্তরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বিভিন্ন বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়।

পুরো কারাফটক জুড়ে ছিলেন ২২ প্লাটুনের মতো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। পুলিশের পাশাপাশি ছিলেন র‌্যাব এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় কারাগারের সামনের সড়কে সাধারণ যান চলাচল ও আশেপাশের সমস্ত দোকানপাট।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
এসকে/আরএম/এডিএ/এজেডএস/এনএ/এসজেএ/আইএ/এসএমএ/এমএ/এমজেড/এইচএ/এসএইচ/এএ/আরআই/এএসআর

** কারাফটকে সাকা-মুজাহিদের মরদেহ বের করার প্রস্তুতি
** ফাঁসির মঞ্চে তারা কোনো রিঅ্যাক্ট করেননি
** গহিরা কবরস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
** শেষ দেখা করে ফিরলো মুজাহিদের পরিবারও
** সাকা প্রাণভিক্ষা চাননি, দাবি বিএনপিরও
** মৃত্যুদণ্ড রাতেই কার্যকর, দাফন গ্রামের বাড়িতে
** সাকা-মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আতঙ্ক নেই রাজধানীবাসীর
** ফাঁসির মঞ্চের রক্ষী দল কারাগারে
** কারাগারে মুজাহিদের পরিবার, বের হয়েছে সাকার পরিবার
** তওবা পড়াতে কারাগারে ইমাম
** প্রাণভিক্ষা চাননি বাবা, শেষ দেখা করে দাবি হুম্মামের
** কারাফটকে ৪ অ্যাম্বুলেন্স
** মুজাহিদ-সাকার মৃত্যুদণ্ড পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে
** সাকার মরদেহ ঠেকাতে রাউজানের প্রবেশপথে মুক্তিযোদ্ধারা
** আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মুজাহিদের শেষ ঠিকানা
** প্রাণভিক্ষা চাওয়‍ার বিষয়টি জানে না সাকার পরিবার!
** রায় কার্যকরের অপেক্ষায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ
** ঔদ্ধত্যের অবসান, মুজাহিদই সেই যুদ্ধাপরাধী!
** মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগানে মুখর কারাফটক
** কারাগারের পথে ফাঁসির নির্বাহী আদেশ
** কারাগারে ম্যাজিস্ট্রেট-আইজি প্রিজন-ডিসি-সিভিল সার্জন
** প্রাণভিক্ষার আবেদন: একাত্তরের অপরাধ স্বীকার মুজাহিদ-সাকার
** কারাগারের ভেতরে সাকার পরিবার, অপেক্ষায় মুজাহিদের
** মুজাহিদ-সাকার ফাঁসি : দ্বিতীয়দিনের মতো প্রশিক্ষণ নিলেন সাত জল্লাদ
** সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি সময়ের ব্যাপার
** মুজাহিদের বাড়ির সামনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
** ‘প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে’
** ফের কারাফটকে ধরনা সাকার আইনজীবীর
** প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তি সময়ের ব্যাপার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
** মুজাহিদের স্ত্রীর বক্তব্যের ভিত্তি নেই, বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল
** একাত্তরের অপরাধ স্বীকার মুজাহিদ-সাকার
**  ফের কারাফটকে ধরনা সাকার আইনজীবীর
** রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক অভিভাবক, সুবিচার চাই
** সাকার প্রাণভিক্ষা নিয়ে বিএনপি-ফারহাত কাদেরের ভিন্নমত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।