ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রংপুরে দেড়শ’ বছরের প্রাচীন স্থাপনা ভাঙার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নাগরিক কমিটির বিক্ষোভ মিছিল

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১১
রংপুরে দেড়শ’ বছরের প্রাচীন স্থাপনা ভাঙার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নাগরিক কমিটির বিক্ষোভ মিছিল

রংপুর: প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরোনো রংপুর টাউন হল, পাবলিক লাইব্রেরি ও ভাষা আন্দোলনের স্মারকচিহ্ন শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রোববার বিকেলে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রংপুর বিভাগীয় নাগরিক কমিটি। মিছিল থেকে জেলা প্রশাসনের এ হটকারী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানানো হয়।



মিছিলকারীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদণি শেষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন।
 
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতিমূলক এক সভায় রংপুর জেলা প্রশাসক বিএম এনামুল হক রংপুর টাউন হল, পাবলিক লাইব্রেরি, রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভেঙে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি এক হাজার আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম ও সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণের ঘোষণা দেন।
 
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, রংপুরে নাট্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিকাশের জন্য ১৮৮৫ সালে তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কালেক্টর ফ্রান্সিস হেনরি স্ক্রাইন আইসিএস-এর উদ্যোগে ও কাকিনার রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় রংপুর টাউন হল স্থাপিত হয়।

এ টাউন হলেই মঞ্চায়িত হয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস দত্তা অবলম্বনে প্রবোধ মুখার্জী নির্মিত নাটক ‘বিজয়া’। দত্তার নাট্যরূপ ‘বিজয়া’ দেখতে এ হলে এসেছিলেন শরৎচন্দ্র স্বয়ং। এসেছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জেএন সেনগুপ্তও। আর বিজয়ায় অভিনয় করেছিলেন রংপুরেরই কৃতী সন্তান নাট্যকার তুলসী লাহিড়ী।

শুধু তাই নয়, প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী শিশির কুমার ভাদুরী, নাট্যশিল্পী শ্রী চারু সান্ন্যাল, তিতু মুন্সী (রাধারমণ মুন্সী), প্রবোধ  মুখার্জী, ললিত চন্দ্র প্রামাণিক, রবীন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রভাবতী দেবী, গিরিশ ঘোষসহ বরেণ্য ব্যক্তিরা এ টাউন হলে নাট্য মঞ্চায়ন করেছেন।

এছাড়াও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ টাউন হল পাকিস্তান হানাদারবাহিনীর বর্বর নির্যাতন কেন্দ্র ছিল। সেদিক থেকেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক।

উনিশ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ সরকার এর জন্য পৌরসভার পাশে জমি বরাদ্দ দেন এবং ওই জমির পাশে আইনজীবী শ্রী অতুুল চন্দ্র গুপ্তের পিতা শ্রী উমেশ চন্দ্র গুপ্ত কিছু জমি দান করেন।

সেখানে চাঁদা সংগ্রহের মাধ্যমে ১৯০১ সালে খড়ের একটি দোচালা নির্মাণ করা হয়। এ দোচালার নামকরণ করা হয় রঙ্গপুর পাবলিক লাইব্রেরি। পরে পাকা দালানের জন্য সম্রাট পঞ্চম জর্জের অভিষেক অনুষ্ঠানের তহবিল থেকে সে সময় ১৫ হাজার টাকা লাইব্রেরির উন্নয়ন কাজের জন্য দান করা হয়। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক স্থাপত্যে নির্মিত হয় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির বর্তমান ভবন।

এরই একটি অংশে ১৩১১ বঙ্গাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে প্রসার কল্পে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রস্তাবনায় ১৩১২ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রংপুর টাউন হলের পাশেই অবিভক্ত ভারতের বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম শাখা হিসেবে রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ গঠিত হয়।

মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৫৬ সালে বর্তমান শহীদ মিনারের স্থানে ছাত্ররা প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকি হানাদারবাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। দেশ স্বাধীনের পর শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে অনন্য স্থাপত্যশৈলীতে শহীদ মিনারের বর্তমান অবকাঠামো নির্মাণ করে রংপুর পৌরসভা।

এসব স্থাপনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ঘটনাপঞ্জির ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে নাগরিক কমিটি স্মারকলিপিতে বিকল্প স্থানে সাংস্কৃতিক পল্লী ও অডিটোরিয়াম নির্মাণের জন্য আহ্বান জানায়।

স্মারকলিপিতে তারা শহরের কোলাহলমুখর আবাসিক এলাকা থেকে রংপুর চিড়িয়াখানা সরিয়ে সেই স্থানে অথবা রংপুর লক্ষ্মী টকিজ-এর পরিত্যক্ত ভবন এলাকায় সাংস্কৃতিক পল্লী ও অডিটরিয়াম নির্মাণের পরামর্শ দেন।

স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য ও অভিনেতা বিপ্লব প্রসাদ,  রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল গণি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র মাহাতা, আওয়ামী লীগ নেতা মুফতি মোহাম্মদ, গণতন্ত্রী পার্টির রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি আরশাদ হারুন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত রাঙা, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ রংপুর জেলা সমন্বয়ক আব্দুল কুদ্দুস, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন, রংপুর কালীবাড়ি কমিটির সাধারণ সম্পাদক বনমালী পাল, প্রজম্ম ’৭১-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবদাস ঘোষ দেবু, রংপুর নাট্যচক্রের সংগঠক ও নাট্যাভিনেতা হাসান আলী, সাংবাদিক মানিক সরকার মানিক, সাবেক ক্রিকেটার আবু আলম হোসেন প্রমুখ।


বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।