ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আজকের ট্রেন কাল, কালকেরটা পরশু!

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৪
আজকের ট্রেন কাল, কালকেরটা পরশু! ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বেলা আড়াইটায় রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে এসে বিকেলের মহানগর প্রভাতীর টিকিট কাটেন ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। ট্রেন কখন আসবে জানতে চাইলে কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা বিদ্রূপ করে বলেন, ‘সকালের মহানগর প্রভাতীই এলো না, আবার বিকেলেরটার খোঁজ নেয়!’

গন্তব্যে যেতেই হবে।

তাই এমন বিদ্রূপও হজম করে স্টেশনে বসে আছেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা। তার মতো হাজারো মানুষ স্টেশনে। কেউ বসে। কেউ দাঁড়িয়ে। কেউবা ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। যাত্রীরা জানে না কখন বাজবে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের হুইসেল।  

ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থেকে বিরক্তিকর সময় কাটছে যাত্রীদের। ট্রেন ঠিক কবে আসবে আর কবেই বা গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে---যাত্রীদের এসব প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারছেন না এখন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা!

হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে গত একমাসে চরম বিপর্যয় ঘটেছে ট্রেনের শিডিউলে। সকালের ট্রেন আসছে বিকেলে, বিকেলেরটা রাতে। আর রাতের ট্রেন ছাড়ছে পরদিন ভোরে বা সকালে। এমনও হচ্ছে, আগের দিনের ট্রেন স্টেশনে আসছে পরের দিন। ঠিকমতো ট্রেন যেমন আসছে না, তেমনি ছেড়েও যাচ্ছে না।

 ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, নাশকতার আশঙ্কা ও কুয়াশার কারণে ট্রেন ছাড়ছে ধীরগতিতে। তাই ট্রেনের শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার দিনে কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ট্রেনই ছেড়ে যায় নি।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে মহানগর প্রভাতী কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও এ প্রতিবেদন লেখার সময়ে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মহানগর প্রভাতী কমলাপুর স্টেশনেই আসেনি। যাত্রীরা ট্রেন কখন আসবে জানতে চাইলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা একেক জন একেক তথ্য দিচ্ছেন।

ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী সকাল দশটায় একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের কমলাপুর ছাড়ার সূচি থাকলেও স্টেশন থেকে বলা হয়েছে, বেলা ৩টার আগে এ ট্রেন স্টেশনে আসবে না।

এছাড়া সকাল ৬টার রাজশাহীগামী ধুমকেতু ছেড়েছে দুপুর ১২টায়। অন্যান্যও ট্রেনও নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর ছাড়তে পারে নি।

গত একমাস ধরেই ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয় ঘটে চলেছে। কমলাপুর স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বেশিরভাগ দিন রাতের তুর্ণা-নিশিথা আসছে পরেরদিন ভোরে বা সকালে। বর্তমানে কোনো কোনো ট্রেন ১০ থেকে ২০ ঘণ্টা পরে স্টেশনে আসছে।

ট্রেনের ভেতর ক্যাটারিং শাখায় কর্মরত একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত একমাসে দেখা গেছে আজকের ট্রেন আসছে কালকে, কালকের ট্রেন আসছে পরশু। এমন অবস্থা চলছে রেলওয়ের।

রেলে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন বক্তব্য তাদেরও, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ট্রেনের শিডিউলে অস্বাভাবিক বিপর্যয় ঘটে চলেছে।

ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, নাশকতার কারণে ট্রেনের গতি কমানো হয়েছে। তাছাড়া কুয়াশার কারণেও গতি কমানো হয়েছে। আগে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে যেসব ট্রেন চলতো সেগুলো এখন চলছে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার বেগে।

তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং রেলওয়ের সম্পদ রক্ষার্থে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার খায়রুল বশীর বলেন, হরতাল-অবরোধে নাশকতা রোধে মাসখানেক আগে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। ‘অ্যাডভান্স পাইলটিং ইঞ্জিন’ নামানো হয়েছে। এটা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয় রেল লাইন ঠিক আছে কি-না! ইঞ্জিনের পেছনে মূল ট্রেন চলতে গিয়ে গতি অর্ধেক কমেছে।

এদিকে টানা অবরোধের কারণে ট্রেনের ওপর চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। যাত্রীরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন না এলেও রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া উচিত যে, এ সময়ে ট্রেন আসবে।

যাত্রীদের এমন কথার উত্তরে রেলওয়ে বলছে, স্টেশন থেকে কোনো যাত্রী ট্রেনের তথ্য চাইলে দেওয়া হয়, তবে সে তথ্য কোনো কোনো সময় সঠিক হয় না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা জানান, বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই রেললাইনে নাশকতা চলছে। দেখা গেলো, কোনো স্থানে রেললাইন উপড়ে ফেলার কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হলো, তখন তা ঠিক করতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এসব কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৪
সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর /জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।