ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ৩০ বছরে কমেছে মাত্র ৩১ শতাংশ

সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১০
কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ৩০ বছরে কমেছে মাত্র ৩১ শতাংশ

ঢাকা: দেশে অপুষ্টিজনিত কারণে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা হ্রাসের চিত্রটা খুব একটা সন্তোষজনক নয়। ১৯৮০ থেকে ২০১০- দীর্ঘ ৩০ বছরের ব্যবধানে পাঁচ বছরের কম বয়সী এ ধরনের শিশুর সংখ্যা কমেছে ৩১ শতাংশ।

   

চিত্রটিতে খুশি নন বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, ৩০ বছরে এই হার নেমে আসা উচিত ছিল ২৫ শতাংশের কাছাকাছি।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনেও বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এশিয়া ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্রে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

আর্মেনিয়া, কম্বোডিয়া, নেপাল বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে। শুধু কম ওজনের শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনার মধ্যেই তাদের অগ্রগতি থেমে নেই, শহর ও গ্রামের বৈষম্যও কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে দেশগুলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত এই হার কমিয়ে আনা না গেলে দেশে মেধাবীর সংখ্যা যেমন কমবে, পাশাপাশি বাড়বে শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম মানুষের সংখ্যাও। বাড়বে রোগ-বালাই। ভেঙ্গে পড়তে পারে স্বাস্থ্যসেবা।

তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই হার কখনো শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে না বলেও অভিমত বিশেষজ্ঞদের। সরকারের পক্ষ থেকে পুষ্টি কার্যক্রম আরও বাড়ানো উচিত বলে মত দিয়েছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রকাশিত বুলেটিনে দেখা যায়, ১৯৮০ সালে  বাংলাদেশে পুষ্টি কার্যক্রম শুরু হয়। তখন কম ওজনের (পাঁচ বছরের কম বয়সী) শিশুর সংখ্যা ছিল ৭২ শতাংশ।

বর্তমানে এই হার  ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ গত ৩০ বছরে কমেছে মাত্র ৩১ শতাংশ। তবে শহর এবং গ্রামে এই হারে তারতম্য রয়েছে। শহরে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ হলেও গ্রামে সেটা ৪৩ শতাংশ।    

বুলেটিনে প্রতি পাঁচ বছরের অগ্রগতিও তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ছিল ৬৭ শতাংশ। যা ১৯৯০ সালে দাঁড়ায় ৬৬ শতাংশে।

এই হার ২০০০ সালে এসে দাঁড়ায় ৫১ শতাংশে। প্রতি একশ’ শিশুর মধ্যে ৪৯ জনই কম ওজন গিয়ে বেড়ে ওঠে।

এরপরের পাঁচ বছরে এই হার কমেছে মাত্র তিন শতাংশ। ২০০৭ সালে এই হার ছিল ৪১ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে কম ওজন নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুর সংখ্যা ৪১ শতাংশেই স্থির রয়েছে। অর্থাৎ তিন বছরে এ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পুষ্টি কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছে সরকারের দু’টি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি ইন্সটিটিউট (আইপিএইচএন) ও স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি (এইচএনপিএসপি)। এর আওতায় দু’টি পুষ্টি কার্যক্রম সারাদেশে কাজ করছে।

আইপিএইচএন পরিচালিত হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় এবং এইচএনপিএসপি সরাসরি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শেখ নজরুল  ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে দেশের পুষ্টি কার্যক্রম খুবই ধীর গতিতে চলছে। এভাবে একটি দেশের পুষ্টি কার্যক্রম চলতে পারে না। সরকারের উচিত বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা।

তিনি আরও বলেন, কম ওজন নিয়ে শিশুর জন্ম হওয়ার মূলত তিনটি কারণ। এগুলো হচ্ছে মায়ের আয়রণ, আয়োডিন এবং ভিটামিন এ’র অভাবজনিত কারণ। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ মা ও শিশু আয়রণের অভাবে ভুগছে। এর ৫০ শতাংশই আবার শিশু।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বলছে, বর্তমানে দেশের ১৭২ টি উপজেলায় পুষ্টি কার্যক্রম চলছে। ২০১১ সালে তা ২৩২ টি উপজেলায় বিস্তৃত হবে। আর ২০২১ সালের মধ্যে ৪৮৩ উপজেলা এই কার্যক্রমের আওতায় চলে আসবে।

অর্থাৎ সরকারের নীতিতেও পুষ্টি কার্যক্রমে আশাব্যাঞ্জক কিছু দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রক্রিয়াধীন স্বাস্থ্যনীতিতে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে।    

অধ্যাপক শেখ নজরুল ইসলাম বলছেন, প্রতিবছর পর্যাপ্ত অর্থ আসছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে। কিন্তু সরকারের উচিত এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারক করা। তা না হলে দ্রুত সফলতা আসবে না।    

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।