ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ওয়ান ইলেভেনের ‘বলি’ ময়মনসিংহের সাবেক ২ এমপি

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৩
ওয়ান ইলেভেনের ‘বলি’ ময়মনসিংহের সাবেক ২ এমপি

ময়মনসিংহ: দেশের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ওয়ান ইলেভেনের ফাঁদে পড়ে রাজনীতিতে ‘বলি’ হয়েছেন ময়মনসিংহের সাবেক দুই সংসদ সদস্য (এমপি)।

এক সময়ের দাপুটে নেতা বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন সরকার এখন অনেকটাই নীরবে সময় কাটাচ্ছেন।



তারকা এ দুই রাজনীতিক নিজ নিজ দলের ভেতরে হয়ে পড়েছেন কোণঠাসা। তাদের রাজনীতিতে এখন চলছে চরম দুর্দিন। তাদের বাড়িও আর আগের মতো নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয় না।

সূত্র মতে, এ দুই রাজনীতিকের পাশাপাশি বিএনপির আরও প্রায় ৩ সাবেক সংসদ সদস্য ওয়ান ইলেভেনের ফাঁদে পড়ে দলের ভেতর অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

এরা হচ্ছেন, ময়মনসিংহ-২ ফুলপুর-তারাকান্দা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার, ময়মনসিংহ-৮ ঈশ্বরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নূরুল কবির শাহীন ও ময়মনসিংহ-৬ ফুলবাড়িয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহম্মেদ।

যদিও এরা পরবর্তীকালে দলের মূল স্রোতের সঙ্গে মিশে গেছেন। তবে ওয়ান ইলেভেন নামের আলোচিত শব্দযুগলের তকমাটি এদের নামের পাশে বসিয়ে দিয়েছেন দলের ভেতরের বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীরা।

দলীয় একাধিক সূত্রের দাবি, ১/১১-এর প্রেক্ষাপটে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার, শাহ নুরুল কবির শাহীন ও প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহম্মেদের মধ্যে ঐক্য থাকলেও এখন তারা আলাদা বলয়ে রাজনীতি করছেন। নিজেদের মধ্যকার ‘ঐক্য’ ভেঙে একলা চলো নীতিতে পথ চলছেন তারা।

এর মধ্যে শাহ শহীদ সারোয়ার উত্তর জেলা বিএনপির রাজনীতিতে নিজেই একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন। শাহ নুরুল কবির শাহীন যোগ দিয়েছেন আফজাল এইচ খান ও মোতার হোসেন তালুকদার বলয়ে। আর প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহম্মেদ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন।

তবে আসন্ন নির্বাচনে এ তিন সাবেক সংসদ সদস্যই মনোনয়ন হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন তাদের বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ সদর আসন থেকে বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ সদর পৌরসভার মেয়র।

ময়মনসিংহে বিএনপির রাজনীতিতে দাপুটে এ সংসদ সদস্য ক্ষমতার পুরো সময়টাতে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে তীব্র বিরোধে জড়িয়ে ছিলেন।

পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেন এলে তিনি বিএনপির বহিষ্কৃত মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কার শিবিরে যোগ দেন। সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সংস্কার ইস্যুতে বেশ সোচ্চার অবস্থানে থেকে শেষতক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হন।

এরপর গত পৌর নির্বাচনেও তিনি দলীয় ‘অনুকম্পা’ বঞ্চিত হন। বলতে গেলে এক প্রকার শেষ হয়ে যায় তার উজ্জ্বল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। এখন অনেকটাই নীরব-নিভৃতে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। মাঝে মধ্যে ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন।

কিন্তু দলের মাঝে তার নড়বড়ে অবস্থান রাজনীতির মাঠ থেকে তার হারিয়ে যাওয়ার সঙ্কেত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।  

ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, সংস্কার শিবিরে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রিয় রাজনীতিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন সরকার ওয়ান ইলেভেনের ‘বলি’ হয়েছেন।

যে কারণে মাঠ পর্যায়ে ভালো অবস্থান থাকা সত্ত্বেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রেজা আলীর সঙ্গে মনোনয়ন যুদ্ধে পরাজিত হন।

এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেও হেরে যান তিনি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের গ্রুপ তার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদটিও হাত ছাড়া হয় মতিন সরকারের। এরপর নিজের অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন।

সূত্র মতে, বর্তমানে আবার অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন আব্দুল মতিন সরকার। স্থানীয় সংসদ সদস্যও তার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রশ্নে ফের দু’জনের সম্পর্কে ফাটল ধরে কীনা এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু ও আব্দুল মতিন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

সংস্কারপন্থিদের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, ‘যারা জিয়া পরিবারের সঙ্গে বেঈমানি করেছে তাদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো আপোষ নেই। কোনোদিন তাদের ক্ষমা করা হবে না। ’

অভিন্ন মত পোষণ করে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের ষড়যন্ত্রের হাতিয়ারদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা বেঈমান। নিমক খেয়ে ওরা নিমক হারামি করেছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৩
সম্পাদনা: রাফিয়া আরজু শিউলী ও শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।