ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চট্টগ্রামে আ. লীগের রাজনীতি মহিউদ্দিনবিরোধী ঐক্য ভেঙে নগর আ.লীগ চার টুকরো

রমেন দাশগুপ্ত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২২ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১০

চট্টগ্রাম : সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের ঐক্য ভেঙে গেছে। সেইসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চারটি সুস্পষ্ট ধারার সৃষ্টি হয়েছে।



দু’ভাগ হয়ে গেছেন মহিউদ্দিনবিরোধী নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি এবং ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে নূরুল ইসলাম বিএসসি বলছেন, নগর আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য কমিটিতে পদ-পদবীর লোভে আ জ ম নাছির দলে বিভেদ সৃষ্টি করছেন।

অন্যদিকে আ জ ম নাছিরের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পে কাজ করায় ুব্ধ নূরুল ইসলাম বিএসসি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যত চারটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেল। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি, আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি এম এ লতিফ পৃথক এ চারটি ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এর মধ্যে আ জ ম নাছির নগর আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও তিনিই চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ছাত্রলীগের একাংশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
 
অন্যদিকে সাংসদ এম এ লতিফ বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে নতুন একটি ধারার সৃষ্টি করেন।

নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য আলাদাভাবে কেন্দ্রে তিনজনের নাম প্রস্তাব করেন সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম বিএসসি।

তিনজন হলেন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং আ জ ম নাছিরউদ্দিন।   এ তালিকায় কেন এককভাবে আ জ ম নাছিরের নাম প্রস্তাব করা হয়নি, এজন্য বিএসসির উপর ুব্ধ হন নাছির।

এমনকি দু’জনের অনুসারীদের মধ্যে এ সময় এক ধরনের অবিশ্বাসও তৈরি হয়।   মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরাজয়ের পর এখন নগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই সে বিরোধ-অবিশ্বাস আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

এর জের ধরে গত শুক্রবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ থেকে এককভাবে মিছিল বের করে।

এ নিয়ে গতকাল শনিবার সকালে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহতাবউদ্দিনের বাসায় নূরুল ইসলাম বিএসসি ও আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ কয়েকজন নেতার বাকবিতণ্ডা হয় বলে জানান দলীয় কর্মীরা।

এরপর বিকেলে নগরীর আন্দরকিল্লায় আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা কেন্দ্র-ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করলেও সেখানে যোগ দেননি বিএসসি ও তার অনুসারীরা।  

নূরুল ইসলাম বিএসসিকে বাদ দিয়ে এককভাবে কর্মসূচি পালন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আ জ ম নাছিরউদ্দিন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘উনি কখন দেশে থাকেন, কখন বিদেশে যান সেটা বোঝা যায় না। অনেক বার দেখেছি তিনি হুট করে মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। কারো অনুপস্থিতিতে দলের কর্মসূচি বন্ধ রেখে আমরা তো আর ঘরে বসে থাকতে পারি না। ’

আ জ ম নাছিরের একক কর্মসূচি পালন প্রসঙ্গে নূরুল ইসলাম বিএসসি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘পদ-পদবীর লোভে উপরে ওঠার কৌশল হিসেবে সে কানার গলিতে আয়না বিক্রির চেষ্টা করছে। তাকে কেউ ডাকেনি, সে এমনিতে আমার সঙ্গে এসেছিল, এমনিতেই চলে যাচ্ছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আ জ ম নাছির আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে থাকলে আমি সে কমিটিতে থাকব না। ’

নূরুল ইসলাম বিএসসির এমন কথা শুনে আ জ ম নাছির বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি নেত্রীর নির্দেশে মহিউদ্দিন ভাইয়ের পে কাজ করার পর থেকে তিনি আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। উনি সিনিয়র নেতা হতে পারেন, তবে আমাদের যদি উনি ওনার ঘরের চাকর মনে করেন তাহলে ভুল করবেন। আমি আমার নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে উনাকে এমপি বানিয়েছি। আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের কথা বার্তায় শালীনতাবোধ থাকা উচিত। ’

দলের মধ্যে এ বিরোধ-বিভেদ নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহিউদ্দিনের অনুসারী খোরশেদ আলম সুজন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সামনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হবে। এটা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি করা। দুষ্ট কাঁটা না থাকলে দলকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হয়। ’

উল্লেখ্য, বিগত সংসদ নির্বাচনে নগরীর কোতোয়ালী আসনে নূরুল ইসলাম বিএসসির মনোনয়নের তীব্র বিরোধিতা করেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

নির্বাচনের পর বিজয়ী নূরুল ইসলাম বিএসসি নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা আ জ ম নাছিরউদ্দিন ও তার অনুসারীদের নিয়ে মহিউদ্দিনবিরোধী স্বতন্ত্র একটি ধারা তৈরি করেন।

এরা সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানুর নেতৃত্বাধীন কমিটির বাইরে নিজেরাই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যানারে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।