কর্তৃত্ববাদের পতনের পর দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় নতুন করে তথ্য কমিশন গঠন না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি অনতিবিলম্বে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও স্বার্থসংঘাতমুক্ত ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তথ্য কমিশনের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা দূর করার দাবিও জানিয়েছে।
একইসঙ্গে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন, তথ্য কমিশনকে সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজানো এবং কার্যকর স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস উপলক্ষে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রসংস্কারে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, তথ্য কমিশন কার্যকর করা ও তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নাগরিক সমাজ এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদানসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সুপারিশ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জনগণের তথ্য জানার অধিকার রক্ষায় সরকারের এই দৃশ্যমান উদাসীনতা দুর্ভাগ্যজনক— এটি এই সরকারের অন্যতম একটি বড় ব্যর্থতা। সরকারের এ ব্যর্থতার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে কমিশন গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, জনগণ তথ্য চেয়ে আবেদন করলেও কমিশন না থাকায় এ সংক্রান্ত অভিযোগের শুনানি হচ্ছে না, সমাধানও মিলছে না। তথ্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ তথ্য অধিকার-সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে মন্থর গতি দেখা যাচ্ছে, যা জনগণের তথ্যে অবাধ প্রবেশাধিকারে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে সরকারি দপ্তরগুলোতে তথ্য গোপনের প্রবণতা এবং স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ না করার সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইন পাশ ও সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা হিসেবে তথ্য কমিশনের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও কর্তৃত্ববাদী সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও অনীহার কারণে আইনটির কার্যকর বাস্তবায়ন হয়নি। একদিকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বিত উদ্যোগের অভাব, অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকারী তথ্য কমিশনারদের একাংশ দলীয় আদর্শের অনুসারী হওয়ায় কমিশনও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়নি।
টিআইবি সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পনের দফা সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— সরকারের নিকট ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে তথ্য অধিকার আইনটি প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করা; রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে তথ্য অধিকার আইনের আওতাভুক্ত করা; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের আয়-ব্যয়ের বিভিন্ন খাতের হিসাব জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা এবং নির্বাচন কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার নিশ্চিতের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং সব ধরনের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা; একাধিক নিবর্তনমূলক আইনের অপব্যবহার করে জনগণের ওপর যে নজরদারি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা বিলুপ্ত করা এবং তথ্যপ্রকাশ ও তথ্যে প্রবেশাধিকারের সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার সহজলভ্য করা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা।
এমআইএইচ/এমজে