ঢাকা, শুক্রবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৩ মে ২০২৫, ২৫ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

দুই আন্দোলনে দিনভর স্থবির ছিল ঢাকা 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩১, মে ২২, ২০২৫
দুই আন্দোলনে দিনভর স্থবির ছিল ঢাকা  বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি | ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথের দাবিতে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে দিনভর স্থবির ছিল রাজধানী ঢাকার একাংশ। বিকেলে দুই আন্দোলনই স্থগিত করা হলে কাকরাইল মসজিদ মোড় ও শাহবাগে যান চলাচল শুরু হয়।

দিনভর স্থবিরতার পর ওই দুই এলাকায় আবার ঘোরে গাড়ির চাকা।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল পৌনে ১১টায় যখন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল, তখন সাম্য হত্যার বিচার ও দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শাহবাগ মোড়ে বসে পড়েন ছাত্রদলের নেতাকার্মীরা। পূর্বঘোষিত এই অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। শাহবাগের পাশাপাশি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনেও অবস্থান নেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে দিনভর শাহবাগেই অবস্থান করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তার স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উত্তাল করে রাখেন পুরো এলাকা। নির্ধারিত সময়ে শুরু না করলেও কর্মসূচির শেষটা ঠিক সময়েই করেছেন তিনি।

ঠিক বিকেল ৫টায় কর্মসূচির সমাপ্তি করে ছাত্রদল সভাপতি আন্দোলনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করুন। তাদের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনারা অতি শিগগিরই সাম্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন। যদি আপনারা অতি দ্রুততম সময়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা (ছাত্রদল) আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমাদের ভাই হত্যার বিচার আমরা রাজপথে আদায় করে ছাড়ব। প্রয়োজনে যমুনা ব্লক করতে প্রস্তুত হব।

আগামীতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেও নতুন করে আপাতত আর কোনো কর্মসূচি দেননি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। পরে তার বক্তব্য শেষে নেতাকর্মীরা শাহবাগ ছেড়ে দিলে শুরু হয় যান চলাচল।

এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ডিএসিসির মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে বুধবার বিকেল থেকেই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ মোড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তার সমর্থক ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। রাতভর অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও একটানা আন্দোলন চালিয়ে যান তারা।

দুপুরে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে বিকেলে ইশরাক কাকরাইল মসজিদ মোড়ে এসে আন্দোলন স্থগিত করেন। পাশাপাশি শপথ পাঠের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে শপথ পাঠের ব্যবস্থা না করা হলে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলবে বলেও জানান।

ইশরাক বলেন, শুরুতে আমাদের পরিকল্পনা ছিল না আন্দোলনে যাওয়ার। কিন্তু সরকার বাধ্য করেছে। বর্তমান সরকারে যে দুইজন উপদেষ্টা রয়েছেন, যারা নতুন দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

যেহেতু বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই আমাদের দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপাতত আন্দোলন সাময়িক বন্ধ থাকবে। ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করব। সরকার কী করবে? পরবর্তীতে তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে নির্দেশনা দেওয়া হবে। কিন্তু দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের আন্দোলন চলবে।

পরে বিকেলে তারা আন্দোলনস্থল ত্যাগ করলে প্রায় ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকা কাকরাইল মসজিদ মোড়ে যান চলাচল শুরু হয়।


বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট যানজটে নাকাল হয় নগরবাসী
 
দিনভর দুই আন্দোলন ও বৃষ্টির কারণে ঢাকার একাংশে যানজটে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। বিজয় সরণি, খামারবাড়ি, আড়ং মোড়, ধানমন্ডি ২৭, সায়েন্সল্যাব মোড়, মৎস্য ভবন মোড়, কাকরাইল, হাইকোর্ট, রমনা, শাহবাগ, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের। দিনভর ভোগান্তির পর সন্ধ্যায় যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন যানজটে প্রতিদিন ভুগতে থাকা রাজধানীবাসী।

যানজটের বিষয়ে অ্যাডিশনাল কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সোরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, বুধবারের তুলনায় আজ সড়কে যানজট আরও বেশি। তা ছাড়া সকালে বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমেছে, তার ওপর শাহবাগ ও রমনায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সড়ক অবরোধের ফলে যানজট তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ঢাকার সড়কের তুলনায় ছয় থেকে সাত গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে, ফলে ব্যস্ত কোনো মোড় বন্ধ হলে সেটির প্রভাব গোটা নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে। সকালে বৃষ্টির পাশাপাশি সড়ক অবরোধের কারণে যানজট বেশি হয়েছে। তবে বৃষ্টির পাশাপাশি অবরোধের কারণে রমনা, শাহবাগ ও মতিঝিল যানজটের ‘ব্লকেড’ ছিল। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সকাল থেকে যানজট নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এটি অব্যাহত থাকবে।

এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।