ঢাকা, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেধাসম্পদ রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: সংস্কৃতি সচিব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
মেধাসম্পদ রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: সংস্কৃতি সচিব ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেধাস্বত্বের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: দেশবরেণ্য মানুষরাই সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করেন, চিন্তা করেন; তারাই দেশের পথ দেখান। তাদের মনোবাসনাই দেশের পথচলার শক্তি।

সেই আলোক বর্তিকাকে আমরা ধারণ করব, লালন করব। সেই মেধা আমাদের দেশের সম্পদ। সেই মেধাকে রক্ষা করতে আমরা আমাদের মেধাকে প্রয়োগ করব। সে জায়গা থেকেই তাদের মেধাসম্পদ রক্ষার উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ।

তিনি বলেন, শাহ মো. আব্দুল করিমের গানের রয়ালিটি আদায় করে দেওয়া হচ্ছে। এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী, আব্দুল আলিমের ছেলেকে আসতে বলা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য থেকেই তাদের মতো মানুষের মেধাসম্পদ রক্ষার উদ্যোগ।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে শেরে বাংলানগরে কপিরাইট ভবনের মিলনায়তনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেধাস্বত্বের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি সচিব এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বড় বড় শিল্পী আছে, কিন্তু তাদের গানের রয়ালিটি আসছে না, টাকা আসছে না। সিনেমার গানের শিল্পীদের অনেক অভিযোগ আছে। তারা রয়ালিটি পাচ্ছেন না। কেন পাচ্ছেন না, এটা আমরা নিশ্চিত করব। যারা গান করেন, সাহিত্য সৃষ্টি করেন, যারা ডিজাইন করেন তাদের কথা্গুলো আমরা একত্র করে তাদের প্রাপ্য নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য আমরা অন্যান্য দেশের এ সম্পর্কিত বিধান অনুসরণ করব। আমরা আমাদের শিল্পীদের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।

সভাপতির বক্তব্যে রেজিস্টার অব কপিরাইটস মো: দাউদ খান মিয়া বলেন, মেধাসম্পদ অধিকার রক্ষা স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম ভিত্তি হতে হবে। যেখানে শিল্পী, কলাকুশলী, মেধাসম্মদের মালিকানা ও উদ্ভাবকের স্বার্থ রক্ষা করবে। এ জন্য যাদের মেধাসম্পদ বেহাত হচ্ছে, কোনো রয়ালিটি পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন, আপনারা আমাদের কাছে আসুন, আমরা তা রক্ষা করতে আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।

মেধাসম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তির তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, মেধাসম্পদ ব্যবহারে রয়ালিটি না পাওয়ার বা আদায় করার ক্ষেত্রে চুক্তি না থাকা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। মেধাসম্পদ ব্যবহারে চুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা গান, নকশা বা জিডাইন যাই হোক চুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। কপিরাইট অফিসে নিবন্ধনও নিশ্চিত করতে হবে। এটা কঠিন কোনো কাজ নয়, কপিরাইট অফিসে এলেই দ্রততম সময়ের মধ্যে এটা নিশ্চিত করা হবে।

মূল্য প্রবন্ধে সাবেক রেজিস্টার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, মেধাসম্পদ অধিকার সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব বাংলাদেশে মেধাসম্পদের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। এই সচেতনতার অভাব মানুষকে মেধাসম্পদ অধিকারের প্রতি অবহেলা এবং লঙ্ঘনে উৎসাহিত করছে। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, আইনি ব্যবস্থার ধীরগতি। দেশে মেধাসম্পদ অধিকার সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিযা যথেষ্ট ধীর এবং জটিল মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। আইনি ব্যবস্থায় এই স্লথগতি মেধাসম্পদের স্রষ্টা বা উদ্ভাবককে মেধাসম্পদের অধিকারের আইনি সুরক্ষা চাইতে নিরুৎসাহিত করছে।

মুক্ত আলোচনায় কণ্ঠশিল্পী সাফিন আহমেদ বলেন, শিল্পীর রয়ালিটি পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। করোনা মহামারির মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে যেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, আবার রয়ালিটিও পাওয়া যায়নি। যে কারণে স্থাবর, অস্থাবর যা কিছু ছিল বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করতে হয়েছে। মেধাসম্পদ রক্ষার ব্যবস্থাপনা থাকলে শিল্পী, গীতিকার ও সুরকারদের এই অনিশ্চয়তায় পড়তে হতো না।

শিল্পীদের অধিকার রক্ষায় নিজেদের মধ্যেও ঐক্য গড়ে তোলার তাগিদ দেন কন্ঠশিল্পী শুভ্র দেব। তিনি বলেন, থিয়েটার বা অন্য পেশাদারদের মধ্যে যে ধরনের ঐক্য গড়ে তুলে শিল্পীদের মধ্যে সে রকম দেখা যায় না। শিল্পীরা একেক জন নিজেদের একেকটি ইনস্টিটিউট মনে করেন।

টেলিভিশনগুলো পুরাতন চলচ্চিত্র প্রচার করলেও কোনো রয়ালিটি দেয় না। আইনি পদক্ষেপ নিলেই রয়ালিটি পরিশোধের বিষয়টি এড়িয়ে ব্যক্তিগত আক্রমন শুরু করে বলে অভিযোগ করেন ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন। তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনে থাকলেও আইনের প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কোনো কোনো কোর্ট ইচ্ছাকৃতভাবেও এসব মামলা কম গুরুত্ব দেন। এর ফলে রয়ালিটি আদায়ের ক্ষেত্রে কোর্টও সহায়ক হয় না।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন কপিরাইট বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: ইমরুল চৌধুরী ও সদস্য খান মাহবুব। সেমিনারে শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, স্থপতি, ডিজাইনার, প্রকাশকসহ মেধাসম্পদ অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন। তারা মেধাসম্পদ রক্ষায় প্রবিধিতে স্পষ্ট করতে গুরুত্ব আরোপ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।