ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জুড়ী ট্র্যাজেডি: সব শেষে মারা গেল ছোট্ট সোনিয়াও

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৪
জুড়ী ট্র্যাজেডি: সব শেষে মারা গেল ছোট্ট সোনিয়াও সোনিয়া আক্তার। ফাইল ছবি

মৌলভীবাজার: জুড়ীতে বিদ্যুতের তার ছিড়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মাথায় মারা গেছে তাদের মেয়ে সোনিয়া আক্তারও (৮)।  

নিহত ফয়জুর রহমানের ছোট মেয়ে সোনিয়া।

এ নিয়ে পুরো পরিবারের মোট ৬ জন সদস্যই মারা গেল।

বুধবার (২৭ মার্চ) ভোরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পৌঁছার আধা ঘণ্টার মাথায় সোনিয়ার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং।

জানা যায়, বুধবার দুপুরের দিকে ঢাকা থেকে সোনিয়ার মরদেহ উপজেলার ২নং পূর্বজুড়ী  ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী ভাঙ্গারপার এলাকার নিজ বাড়ির আঙিনায় পৌঁছে। এর পর দুপুর ২টায় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সোনিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে ভোর ৪টার দিকে মৃত্যু হয় পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা ওই সদস্য’র।  

জানা গেছে সোনিয়ার শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ বার্ন হওয়ায় এমনিতেই তার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।

এদিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের পর মোট ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক।  
ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম চৌধুরীকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলুল করিম এবং কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দিপংকর ঘোস।

গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান,  গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।  

জেলা প্রশাসক বলেন, এ ঘটনায় আমরাও শোকাহত। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং জানান, ‘খুঁটিতে কোনো ট্রান্সফরমার ছিল না। তাই প্রাথমিকভাবে আমাদের যেটা ধারণা হয়েছে সেটা হলো বিদ্যুতের খুঁটির ওপর বজ্রপাত হওয়ায় তারটা ছিড়ে যেতে পারে এবং ঘরটি টিনের হওয়ায় বিদ্যুতায়িত হয় এবং বিদ্যুতায়িত হয়ে সবাই মারা যায়। ঘটনাস্থলে আমিসহ পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম ছিলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ও পুলিশের লোকজনও ছিলেন। এখানে উপজেলা লেভেলে আমাদের থেকে বড় কোন বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। ঘরটা বানানো হয়েছে ১১ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইনের অনেক পরে। ওই ধরনের ভল্টের নিচে বাড়ি করা ঝুঁকিপূর্ণ। ’ 

ঘরের ওপর পল্লী বিদ্যুতের যে লাইন গেছে সেটা অনেক পুরোনো এবং তুলনামূলক অনেকটা দুর্বল হওয়ায় সেটার সংস্কার কাজও চলমান বলে জানান তিনি।

এদিকে যে ঘরটিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ওই ঘরটিতে মূলত বিদ্যুৎই ছিল না বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু গণমাধ্যমকর্মীসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি।  

মাত্র চার বছর আগে স্থানীয় মৃত রহমত আলীর মালিকানাধীন ভূমিতে ওই ঘরটি তৈরি করেন বাকপ্রতিবন্ধী নিহত ফয়জুর রহমান। ঘরটির ওপর দিয়ে এতো হাই ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও ওই ঘটনার দায় কোন পক্ষই নিচ্ছেন না।  

আর তাতেই জনমনে প্রশ্ন, তাহলে দায় কার? স্থানীয়রা বলছেন, এমন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ লাইন আরও অনেক রয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনা আরও ঘটারও আশঙ্কা তাদের।

ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বিদ্যুৎ লাইনের নিচে ঘরটি বানানোর সময় পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে নিহত ফয়জুর রহমানের পরিবারকে বাঁধা দেওয়া হলেও তারা কথা না শুনে উল্টো পল্লী বিদ্যুতের লোকজনকে হেরাজমেন্ট করে বলে তিনি দাবি করেছেন।  

এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের কোনো দায় আছে কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমি কোনো দায় দেখছি না, তবে লাইনটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ’ 

পুরো বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মিজানুর রহমান বলেন, যেহেতু তদন্ত কমিটি হয়েছে তাই আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ঢাকা থেকে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসেছেন, তারাও সরেজমিন বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৪
বিবিবি/এসএএইচ                                  
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।