ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, বাড়ছে রোগবালাই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, বাড়ছে রোগবালাই

মেহেরপুর: গত কয়েকদিনে মেহেরপুর জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হাড়কাঁপানো তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশা। এতে করে মানুষের জীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে।

বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, সারাদিন হিমশীতল বাতাসের সঙ্গে তীব্র শীত আর ঘনকুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মেহেরপুরের জনজীবন। কনকনে বাতাসে বিশেষ কর নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও ক্ষেতমজুরসহ শ্রমজীবী মানুষ। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুগুলোও শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত বিবারণের চেষ্টা করছেন।

গাংনী উপজেলা শহরের অটোরিকশাচালক খোকন মিয়া  বলেন, শীতের তীব্রতা বেশি ও অধিকাংশ সময়েই কুয়াশা থাকছে। এ কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কেউ বের হচ্ছে না। দিনের অনেকটা সময় যাত্রী অভাবে বসে থাকতে হচ্ছে।

মেহেরপুর শহরের রিকসা চালক আয়ূব হোসেন বলেন, তীব্র শীতের কারণে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদিনে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা রোজগার হচ্ছে। অন্যান্য সময় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া মারি। এখন সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তি চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ৬টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৪ শতাংশ। একই তাপমাত্রা মেহেরপুর জেলার জন্যও প্রযোজ্য।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, শীতবস্ত্রের যা বরাদ্দ এসেছিল এরইমধ্যে বিতরণের কাজ শুরু করা হয়েছে।  

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো. শামীম হাসান জানান, সরকারি ত্রান তহবিল থেকে জেলায় এখন পর্যন্ত চার হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ছিন্নমুল অসহায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কম্বল আসবে সেটা বিতরণ করা হবে।

এদিকে, শীত গত কয়েকদিনে শীত ও ঠান্ডা জনিত কারণে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৭৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুল আল মারুফ বলেন, গত এক সপ্তাহে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীত ও ঠান্ডা জনিত রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৭৬ জন। এদের মধ্যে ৫২ জন শিশু, ৭৬ জন নারী ও ৪৮ জন পুরুষ। এদের মধ্যে ৭২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় বর্তি হয়েছে ১২ জন রোগী।
 
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার তৌফিক আহমেদ জানান, গত এক সপ্তাহে শীত ও ঠান্ডা জনিত কারণে প্রায় ৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন শিশু ও ১০ জন নারী ও ৭ পুরুষ। এদের মধ্যে ২১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। যার মধ্যে ১৩ জনই শিশু। তবে গত দুই দিনের প্রচণ্ড শীতের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে পাঁচজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী।

মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাক্তার জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার বলেন, শীত ও ঠান্ডা জনিত কারণে গত এক সপ্তাহে ১৬৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০১ জন, নারী ৩০ ও পুরুষ ৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন সাত জন রোগী।  

এদিকে শীতের কারণে আবহাওয়া জনিত যে সমস্ত রোগ বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ঠান্ডা কাশি ও জ্বরের হাত থেকে রক্ষা পেতে পরিবারের শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।