ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রেকর্ড জনশক্তি রপ্তানিতে পার হয়েছে ২০২৩

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
রেকর্ড জনশক্তি রপ্তানিতে পার হয়েছে ২০২৩

ঢাকা: অর্থনীতির নানা খারাপ খবরের মাঝেও জনশক্তি রপ্তানিতে সুখবর দিয়ে বছর শেষ হতে যাচ্ছে। বিদায়ী এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর, ১০ মাসে প্রবাসে গেছে ১২ লাখ ১০ হাজার ২৫৬ জন।

একক বছর হিসেবে বিদেশে যাওয়া মানুষের সবচেয়ে বড় সংখ্যা এটি।

বছরের শেষ দুই মাস- নভেম্বর ও ডিসেম্বররে জনশক্তি রপ্তানির হিসাব যোগ হলে এ সংখ্যা ১৫ লাখের ঘর স্পর্শ করবে। দেশের অর্থনীতির প্রধান তিন ভিত্তির অন্যতম হলো প্রবাসী আয়। বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন স্থিতিশীল রাখার মধ্য এ খাত আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব ও বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে। রিজার্ভ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষের জীবন যাত্রাকে সহজ করতে সহায়তা করে। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রাই যার প্রধান ও একমাত্র উপায়।

স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিবছর বিদেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া মানুষের যে হিসাব জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোয় (বিএমইটি) রয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ছিল ২০১৭ ও ২০২২ সালে। এ দুই বছরে প্রবাসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন ও ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন।

২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে থেকে প্রবাসীরা ফিরে আসে। ২০২২ সালে নতুন করে আবার বিদেশে ফিরে যাওয়া শুরু হয়। ফলে গত বছরে প্রবাসে যাওয়া মানুষের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড হয়। রেকর্ড ভাঙে চলত বছরে।

বিদেশ যাওয়ার রেকর্ড গড়তে শুরু করে ২০১১ সালে। সে বছর বিদেশে যায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার জন। ২০১২ সালে ৬ লাখ ৭ হাজার ৮০০; ২০১৩ সালে ৪ লাখ ৯ হাজার ২৫৩; ২০১৪ সালে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪; ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১; ২০১৬ সালে ৭ লাখ  ৫৭ হাজার ৭৩১; ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১; ২০১৯ সালে ৭ লাখ ১৫৯; ২০২০ সালে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৭ ও ২০২১ সালে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন বিদেশে গেছে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) সভাপতি আবুল বাশার বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের চাহিদা ও দেশে আমরা যারা বিদেশ জনশক্তি রপ্তানি করছি, রপ্তানিকারক সংগঠনগুলোর বিষয়টি কাজে লাগানোর ফলে জনশক্তি বাড়ছে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশে গিয়ে কাজ করার মতো বিপুল সংখ্যক জনশক্তি রয়েছে দেশে। এই জনশক্তি বিদেশে গিয়ে রোজগার করে দেশে পাঠাচ্ছে। ফলে জনশক্তি পাঠানোর গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানিতে আমাদের আরও সুযোগ রয়েছে। সারা দেশে বিপুল জনসম্পদ রয়েছে যাদের বিদেশে কাজের জন্য পাঠানো যায়। এ জন্য বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের সহযোগিতা করতে হবে। বিদেশে কাজের ক্ষেত্রগুলো অনুসন্ধানের পাশাপাশি প্রবাসীদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো দূতাবাসকে দেখতে হবে। তাহলে এখন জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে যে জায়গাটা করা সম্ভব হয়ে তার গতি আরও বাড়বে।

চলতি বছরে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় অক্টোবর শেষে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ১০ মাসে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪৩১ জন। আগের পুরো বছরে রপ্তানি হয়েছিল ৫০ হাজার ৮০ জন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার ও লেবাননে উল্লেখযোগ্য হারে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে।

জনশক্তি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে প্রধান জনশক্তি আমদানিকারক দেশ সৌদি আরবে। দেশটিতে গত বছরের ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল। চলতি বছরের ১০ মাসে জনশক্তি রপ্তানি কমে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫০২ জনে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মৌরতানিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি কিছুটা কমলেও ডিসেম্বর শেষে আগের বছরের সমান হয়ে যাবে বলে মনে করছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সূত্র।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ ব্যাপারে বলেন, মানুষ কাজ নিয়ে বাইরে যাচ্ছে; কিন্তু সে হারে প্রবাসী আয় আসছে না- এমন তথ্য দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আশঙ্কা দেশের ডলার বাজার অস্থির হওয়ার কারণে খোলা বাজারে দাম বেশি। আর এই বেশি দাম নিতে প্রবাসীদের বড় অংশ অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। এ রেমিট্যান্স বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা হচ্ছে না।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টাকা পাচার রোধ না করতে পারায় বিদেশে লোক পাঠিয়েও কাজ হচ্ছে না। আগামীতেও বাড়তি লোক বিদেশে যাওয়ার বাড়তি রেমিট্যান্স আমরা পাবো না। প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত লোকজন এই পাচারের সাথে যুক্ত। রাজনীতিকরা এর সঙ্গে যুক্ত। তারা বিদেশে ছেলে-মেয়ে পাঠাচ্ছে, সঙ্গে তাদের টাকাও পাঠিয়ে দিচ্ছে। যাদের সন্তানরা আগে দেশে গেছে, নিজে সারা জীবন দেশে থেকে রোজগার করে সম্পদ বানিয়েছে। শেষ বয়সে এসে সেই সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে ছেলে-মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অবৈধভাবে পাঠাতে তারা হুন্ডি কারবারিদের মাধ্যমে প্রবাসী আয়কে ব্যবহার করছে। এর ফলে কাজের সন্ধানে বিদেশের যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়লেও প্রবাসী আয় সে হারে বাড়ছে না।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে হলে ব্যবস্থাপনার সংস্কার করা প্রয়োজন। যাতে পাচারকারীরা ইচ্ছা করলেও হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারবে না।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে প্রবাসী আয় এসেছিল দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার; ২০২২ সালে এসেছিল দুই হাজার ১২৮ কোটি ৫২ লাখ। ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধপথে প্রবাসী আয়ের ডলার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার পর কিছুটা বেড়েছে। ২০২৩ সালে ১০ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে দুই হাজার ১৫৮ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।